ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

স্বপ্ন পূরণের সারথী ‘ফেনী ইউনিভার্সিটি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮
স্বপ্ন পূরণের সারথী ‘ফেনী ইউনিভার্সিটি’

পড়ালেখার পাশাপাশি একটি রেস্তোরাঁ আছে ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহ আলমের। পড়ালেখার খরচ চালানোর পাশাপাশি আর্থিক যোগান দেন পরিবারেও। মাঝে পড়ালেখায় লম্বা গ্যাপ থাকলেও তার এখন স্বপ্ন লন্ডনে বার-অ্যাট-ল’ করা। নিজের সেই স্বপ্ন পূরণে শাহ আলমের সারথী ফেনী ইউনিভার্সিটি। 

তাইতো কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তাদের; ‘আমরা যারা নিজের এলাকায় থেকে ইঞ্জিনিয়ার বা ল’ইয়ার হতে চাই, তাদের জন্য সেটা এখন আর দিবাস্বপ্ন নয়। আমি হয়তো ঢাকায় পড়ালেখা করলে পড়া শেষ করে এসে শূন্য থেকে একটি রেস্টুরেন্ট শুরু করতাম।

আর এখন ছাত্রাবস্থায়ই আমার রেস্টুরেন্টটি প্রতিষ্ঠিত। এখান থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য আমার বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছে আছে। এখন সেই ক্যাপাবিলিটিও আমার আছে। অথচ ঢাকায় পড়লে সেটা কখনো সম্ভব হতো না। কারণ আমার মধ্যবিত্ত পরিবার কখনো এতো টাকার যোগান দিতে পারতো না। তাই যারা এখানে ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন তাদের ধন্যবাদ। ’

বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজের এলাকায় হওয়ায় পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করেন আরও অনেকেই। চাকরির কারণে ক্লাস মিস হয় কি-না, জানতে চাইলে শাহ আলম বললেন, ‘শিক্ষকেরা এমনভাবে ক্লাস রুটিন তৈরি করেছেন, যেন চাকরি করতে সমস্যা না হয়। অনেকেই চাকরির টাকায় টিউশন ফি দিয়ে বাড়তি টাকা সঞ্চয় করছেন, এটাও শিক্ষার্থীদের জন্য একটা বড় পাওয়া। ’ফেনী ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসতবে এখনই সাফল্যের ঢেঁকুর গিলতে চান না প্রতিষ্ঠাতারা। ফেনী জেলার স্বনামধন্য ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে গঠন করা হয় বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বর্তমান সভাপতির দয়িত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। তাদের স্বপ্ন আরও অনেক দূর পথ পাড়ি দেওয়া।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন রচনার গল্প করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুস সাত্তার বলেন, ‘বৃহত্তর নোয়াখালীতে কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। এছাড়া দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায়, ফেনী একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। তাই উচ্চ শিক্ষার জন্য আমরা ফেনীতে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেই। আমাদের সমন্বিত উদ্যোগের কারণে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আমরা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন পেয়ে যাই এবং ২০১৩ সালেই আমরা আমাদের প্রথম সেমিস্টার শুরু করে দেই। এখন আমাদের এখানে ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ভর্তি চলছে। আমি মনে করি এটি জেলা পর্যায়ে দেশের একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিগণিত হতে চলছে। তাই বলে আমরা এখানেই থেমে থাকবো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি আরও বাড়িয়ে মোহাম্মদ আলী বাজারে নিজেদের সাড়ে দশ একর জায়গায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ’

বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে একমাত্র পাবলিক ইউনিভার্সিটি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসটিইউ)। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফেনী ইউনিভার্সিটির ইইই বিভাগের ইলেক্ট্রিকাল মেশিন ল্যাব ব্যবহার করতে আসেন। এছাড়া সিমুলেশন ল্যাবসহ আরও বেশ কয়েকটি ল্যাব ব্যাবহার করার ব্যপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এনএসটিইউ’র শিক্ষার্থীরা। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ল্যাবে যে উন্নতমানের সরমঞ্জাম প্রতিস্থাপন করতে পারেনি, সেটা পেরেছে ফেনী ইউনিভার্সিটি।

ফেনী ইউনিভার্সিটিতে প্রায় বছরখানেক আগে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মৎস্যবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. সাইফুদ্দিন শাহ। গেলো এক বছরে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গবেষণাকে আরও ত্বরান্বিত করতে চলতি বছরের শুরুতে গঠন করা হয়েছে ফেনী  ইউনিভার্সিটি রিচার্স সেল (এফইউআরসি)। ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে ফেনী ইউনিভার্সিটি জার্নাল। প্রত্যেকটি বিভাগের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ল্যাবরেটরি। আছে সার্বক্ষণিক ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা। ক্লাস পরীক্ষার পাশাপাশি নিয়মিত আয়োজন করা হয় সেমিনার-সিম্পোজিয়াম। এখানে রয়েছেন একঝাঁক অভিজ্ঞ শিক্ষক।  ল্যাবে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরাদেশের সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় থাকা এসব শিক্ষকের আছে বিদেশি উচ্চতর ডিগ্রিও। এ ইউনিভার্সিটিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন প্রফেসরকে উপদেষ্টা অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিয়োগ, প্রশ্নপত্র মডারেশনসহ প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য নেওয়া হয় বাইরের বিশেষজ্ঞদের। ফেনী ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের তিনটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গৃহীত হয়েছে। এখান থেকে পড়ালেখা শেষ করে ব্যাংক, সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন অনেকেই। অর্ধযুগ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সাফল্যের গল্প আরও অনেক।

ফেনী ইউনিভার্সিটির এভাবে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলার বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. সাইফুদ্দিন শাহ বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত অথচ মেধাবী বা এমন শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পড়ে, সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখি। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে, সেভাবেই আমরা তাদের গড়ে তুলতে চাই। ’

ফেনী ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ফেনী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর তায়বুল হক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন পুঙ্খানুপুঙ্খুরূপে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শুধু ফেনী থেকে নয়; উত্তর চট্টগ্রাম, কুমিল্লার একাংশ ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকেই আমাদের এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে ফেনী ইউনিভার্সিটি। ’

বিবিএ, এমবিএ, ইএমবিএ, এলএলবি, বিএ ইন ইংলিশ, এমএ ইন ইংলিশ, এমএসসি ইন ম্যাথমেটিক্স এর পাশাপাশি রয়েছে লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার সুযোগ। মাধ্যমিক ও ডিপ্লোমা পাস করা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেক্ট্রিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। স্প্রিং সেমিস্টারে ২৫ জানুয়ারি-২০১৯ এর আগে ভর্তি হলে দিতে হবে না ভর্তি ফি; পাশাপাশি টিউশন ফির ওপর ২০ শতাংশ ছাড় পাবেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, রেজাল্টসহ অন্যান্য ওয়েভারও প্রযোজ্য হবে।

লেখক
মেহেদী হাসান
জনসংযোগ কর্মকর্তা
ফেনী ইউনিভার্সিটি

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।