সাম্প্রতিক সময়ে আদালতের রায়, ডাকসু সচল চেয়ে আন্দোলন, অনশন ও প্রশাসনের নির্বাচনের প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে উঁকি দিয়েছে প্রাণবন্ত ডাকসু দেখার স্বপ্ন। কর্তৃপক্ষের ঘোষিত সময়ানুযায়ী জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব তৈরির প্ল্যাটফরম ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করাই ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বাংলানিউজকে বলেন, সব পক্ষকে নিয়ে নির্বাচনের জন্য যে যথোপযুক্ত পরিবেশ দরকার সেটি স্বল্পতম সময়ে সৃষ্টি করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জর বিষয়। দীর্ঘদিন ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণে এটি আরো কঠিন। তারপরেও বিশ্বিবিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রসংগঠনগুলোর সহযোগিতা পেলে, প্রকৃত ছাত্ররা এগিয়ে আসে তাহলে এ চ্যালেঞ্জে উত্তরণ সম্ভব হবে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক কাজগুলো শুরু করা হয়েছে। গেল বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় মার্চ মাসে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সভাপতি-সম্পাদকদের সঙ্গে নিয়ে মতবিনিময় করে। ৩১ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের হলভিত্তিক ডাটাবেজ প্রকাশ করে। এছাড়া প্রাধ্যক্ষদের সভায় ডাকসু বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তফসিল ঘোষণা, নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সব বিষয়ে দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ডাটাবেজ প্রকাশ করার পর নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাসও দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তালিকায় নাম থাকার কথা প্রকাশ করে বিভিন্ন ধরনের প্রত্যাশাও তুলে ধরেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যবহারিকভাবে সামান্তবাদে রূপান্তরিত হয়েছে, যেখানে শিক্ষকেরা সামান্ত আর তাদের ইচ্ছেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্তা৷ ডাকসু নির্বাচন ফরাসি বিপ্লবের ন্যায় একটি শ্রেণী নিয়ন্ত্রিত কাঠামো থেকে আমাদের বের করে আনবে এবং শিক্ষা তথা জাতি গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা তরান্বিত করবে। ’
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দীর্ঘদিন ডাকসু নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে না পারার কারণ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা কোনো দলই নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয়ে। এবার একাদশতম জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ। টানা তিনবার সরকার গঠনের ফলে দলটির ভাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগও নির্বাচনের বিষয়ে খুবই আগ্রহী।
মার্চ ৩১ তারিখের যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে নির্বাচন চান ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রশাসন নির্বাচনের ব্যাপারে অনেকগুলো চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগগুলো পরিণতি পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। ছাত্রলীগ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ছাত্রলীগের প্যানেলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত ছাত্রনেতা বেছে নেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। নির্বাচন পেছানোর কোনো ধরনের তালবাহনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে আশা করি না। ’
নির্বাচনকে পেছানোর কোনো ধরনের পাঁয়তারা না করে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার কারা রাখে সেটি প্রমাণ করার আহ্বান জানান ছাত্রলীগের এ নেতা।
ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মার্চের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজনের কথা বলেছিল। কিছু উদ্যোগ দেখেছি আমরা কিন্তু অনেক কিছুই এখনো বাকি। জানুয়ারিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে পরিবেশ সংসদকে সক্রিয় করে সব পক্ষকে নিয়ে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আশা করছি কর্তৃপক্ষ দ্রুত উদ্যোগ নেবে। এটি নতুন বছরে ঢাবির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে ছাত্রসংগঠনগুলোর সহযোগিতা পেলে ঘোষিত সময়ে ডাকসু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন মাস্টার দা’ সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, প্রশাসন নির্বাচনের বিষয়ে আন্তরিক আছে। ছাত্রসংগঠনগুলো যদি আন্তরিক হয়ে আসে তাহলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সম্ভব। প্রশাসন সব বিষয়ে ধীরে-সুস্থে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ডাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৮
এসকেবি/এসএইচ