ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় মনোযোগী, বাজিমাত ইংরেজিতে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় মনোযোগী, বাজিমাত ইংরেজিতে! পাস করার পর শিক্ষার্থীদের উল্লাস/ ছবি- শাকিল

ঢাকা: বরাবরের মতো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে কঠিন বিষয় হলো ‘ইংরেজি’। ইংরেজির ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত্র শিক্ষার্থীরা। গণিতের পাশাপাশি ইংরেজি বিষয়েই বেশি গুরুত্ব দেন শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং অভিভাবকেরা। এইচএসসিতে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী বাদে সাধারণদের গণিতের মুখোমুখি হতে হয় না। তবে এবার সব বিভাগের আবশ্যিক বিষয় ইংরেজিকেই জয় করেছে ছেলেমেয়েরা।

পাশাপাশি পরীক্ষায় অসুদপায় অবলম্বনের সুযোগ না থাকায় ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় অধিকতর মনোযোগী হয়েছে বলে সার্বিক ফলাফলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে; এমনটাই মনে করছেন বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক।

এবার গড় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা গতবারের চেয়ে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি।

একই সঙ্গে বেড়েছে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা। গতবছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৯ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী। এবার ১৮ হাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জনে।

এইচএসসিতে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য- সব শাখার শিক্ষার্থীদেরই ইংরেজি আবশ্যিক বিষয়। ইংরেজিতে গতবছর খারাপ করেছিল শিক্ষার্থীরা, পাশাপাশি আইসিটিতেও খারাপ ফলে নেতিবাচক ফল এসেছিল।

গড় পাসের হার

পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিভিন্ন বোর্ডে গতবারের তুলনায় ইংরেজিতে তুলনামূলক ভালো ফল করেছে শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গতবছর ইংরেজিতে পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ, এবছর বেড়ে হয়েছে ৭৬ দশমিক ৩৪। রাজশাহীতে ৭২ দশমিক ৬৭ থেকে বেড়ে ৯৬ দশমিক ৮৬, কুমিল্লায় ৭৩ দশমিক ৩৫ থেকে বেড়ে ৯৬ দশমিক ৪৬, যশোরে ৬৫ থেকে বেড়ে ৯৫ দশমিক ২২, চট্টগ্রামে ৭৩ দশমিক ৭৪ থেকে বেড়ে ৯৩ দশমিক ০৯, বরিশালে ৭১ দশমিক ০৬ থেকে বেড়ে ৯১ দশমিক ৬১, সিলেটে ৮২ দশমিক ৩৩ থেকে বেড়ে ৯২ দশমিক ৪৮ এবং দিনাজপুরে ৬৫ দশমিক ৫১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৫ দশমিক ১৩ শতাংশ।

ফলাফল বিশ্লেষণে আরো দেখা গেছে, বাংলা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, হিসাব বিজ্ঞান এবং পৌরনীতি বিষয়ে গতবছরের তুলনায় ভালো ফল এসেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে ইংরেজি বিষয়ে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মনে করেন, উচ্চ মাধ্যমিকে তিন শাখার অর্ধেক শিক্ষার্থীই কিন্তু ইংরেজি এবং আইসিটিতে খারাপ করে। খারাপ করলে মোট ফলাফলের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দুই বিষয়ের ফল সার্বিক ফলাফলে পরিবর্তন এনেছে। ইংরেজি এবং আইসিটিতে গতবারের চেয়ে প্রায় ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভালো ফলের জন্য শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বৃদ্ধি পাওয়াকে গুরুত্ব দেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জিয়াউল।

‘আরেকটি বিষয় এবার গুরুত্ব দিচ্ছি, এবারের শিক্ষার্থীরা বিগত বছরের চেয়ে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী বেশি ছিল। কারণ, তারা অনেক দিন থেকেই জানে পরীক্ষায় কোনো ধরনের প্রতারণা, ফাঁক-ফোকড়- এগুলো হবে না। এজন্য তারা পড়ালেখায় তাদের মনোযোগও বেশি ছিল। ’

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সভাপতির মতো মত দেন বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনোয়ারুল আজিম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করায় সার্বিকভাবে এবারে ফলাফল ভালো হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আরও যত্নশীল হতে হবে।

বিজ্ঞানের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কারণে শিক্ষার্থী যেমন বেড়েছে তেমনি পাসের হারও বেড়েছে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, এবছর ২০১৮ সালের তুলনায় বিজ্ঞান বিভাগে ১৩ হাজার ৯৩০ জন পরীক্ষার্থী বেশি অংশগ্রহণ করেছে এবং ১৮ হাজার ৬১ জন বেশি পাস করেছে। বিজ্ঞান শাখায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি উত্তীর্ণের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানের পাশাপাশি মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় পাসের হার গত বছরের চেয়ে বেশি।

গত বছরের তুলনায় এ বছরের ফলের সূচকে বেশকিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষায় পাসের হার বৃদ্ধি ও জেলা-উপজেলা সদরে শিক্ষার্থীরা ভালো করেছে। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এ তথ্যগুলো খুবই ইতিবাচক।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টাসহ পুরো শিক্ষা পরিবারের সার্বিক সহযোগিতায় এ অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী।

গতবারের চেয়ে এবার তিন ধাপ এগিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড প্রথম হয়েছে। শীর্ষে থাকা নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, আইসিটি, ইংরেজি এবং গণিতে জোর দিয়ে জেলায় জেলায় কর্মশালা করে পরামর্শ দেই কীভাবে ভালো করা যায়। অভিভাবক-শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার সম্মিলিত প্রয়াসে কাঙ্ক্ষিত ফল হয়েছে।

তবে ফল মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাস বা জিপিএ বাড়া কমায় কোনো তাৎপর্য নেই। ভালো শিক্ষক দিতে পারছি না। ক্লাসরুমে পড়ানো হয় কিনা, কোচিংয়ে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়গুলো গুরুত্বের।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।