ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবিতে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের হাতাহাতি

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২০
রাবিতে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের হাতাহাতি

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। 

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। এতে প্ল্যানিং কমিটির দুই সদস্যসহ বিভাগের তিনজন শিক্ষক উপস্থিত হলে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

একপর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন পণ্ড হয়ে যায়।

এর আগে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন বিভাগের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্ল্যানিং কমিটির তিন সদস্য।

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম, যুগোল কুমারের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। পরবর্তীতে প্ল্যানিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাওছার আলী ও নুরুল আলম এবং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক একে এম বারী উপস্থিত হলে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এরআগে, সোমবার প্ল্যানিং কমিটির তিন সদস্য সংবাদ সম্মেলন করে (অধ্যাপক মু. আলী আসগর, নুরুল আলম এবং কাওছার আলী) অভিযোগ করেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে ২২ ও ২৬ ডিসেম্বর দুটি সভা ডাকেন। এসব সভায় উপস্থিত ছিলেন না অথচ দুই জন সদস্যকে উপস্থিত দেখানো হয়েছে। সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় প্ল্যানিং কমিটির সভা ডেকে সভাপতি নিজেই আসেননি।

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সঠিক সময় চিঠি ইস্যু করেছি। তারা হয়তো বক্স খুলে দেখেন নাই। তাই চিঠি পাননি।  

সংবাদ সম্মেলনে হাতাহাতি বিষয়ে তিনি বলেন, কাল তারা যখন সংবাদ সম্মেলন করেছেন আমরা সেখানে যাইনি। কিন্তু আজ সংবাদ সম্মেলনকে পণ্ড করতে তারা এখানে উপস্থিত হন।

ক্রপসায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্য নুরুল আলমের দাবি, তিনি গত ২৬ ডিসেম্বর পৌনে ১০টার দিকে বিভাগে এসেছিলেন। এবং বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জয়পুরহাটে তার শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন। অথচ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ওই দিন দুপুর দুইটায় প্ল্যানিং কমিটির ৫৮তম সভায় উপস্থিত দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি ২৬ ডিসেম্বর বেলা ১২টা পর্যন্ত কোনো চিঠি পাইনি।

এর আগে ২২ ডিসেম্বর প্ল্যানিং কমিটির ৫৭তম সভা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নুরুল আলম বলেন, ওই দিন আমি বিভাগে ছিলাম। চতুর্থ বর্ষের একটি পরীক্ষা ছিল। বিকেল চারটার দিকে অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম এসে আমাকে বলেন, ‘স্যার আপনি গোপনে একটি স্বাক্ষর করেন বাকিটা দেখা যাবে। ’ কিন্তু আমি স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানাই। ’

প্ল্যানিং কমিটির ৫৭ ও ৫৮ তম সভায় উপস্থিত দেখানো হয়েছে এমন আরেক সদস্য অধ্যাপক মো. কাওছার আলী জানান, কমিটির অন্য সদস্যরা সভা সম্পর্কে পূর্ব থেকে কোনোভাবে হয়তো জেনে থাকতে পারেন। কিন্তু আমি সভা সম্পর্কে কিছুই জানি না। সেখানে উপস্থিত থাকার তো প্রশ্নই আসে না।

বিভাগের অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে চাইলে অফিসের পিয়ন মোতালেব জানান, সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম এবং অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম এসে রেজিস্ট্রার ডায়রি ও পিয়ন রেজিস্ট্রার খাতা নিয়ে চলে গেছেন।

জানতে চাইলে খাতা নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিভাগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিগত কাজে নিয়ে গিয়েছিলাম। কাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতরে ছিলাম। তাই আজ খাতা নিয়ে এসেছি।
 
সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে পরপর দুটি প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের মিটিং দেখানোর কারণ কি জানতে চাইলে প্ল্যানিং কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক মু. আলী আসগর বলেন, অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম আমাকে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে বলা হয়েছে তিনটি প্ল্যানিং কমিটির সভা হয়েছে অথচ সিদ্ধান্ত হয়নি দেখিয়ে প্রশাসনের কাছে পাঠাতে। সে জন্য হয়তো তিনি এমনটা করেছেন।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক সংখ্যা ছিল ১৩ জন। দীর্ঘ এই ১৫ বছরে আর কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। ২০১৬ সালের ৬ই নভেম্বর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দীনের আমলে তিনটি পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে ৩৮টি দরখাস্ত জমা পড়ে। পরবর্তীকালে বতর্মান প্রশাসন চলতি বছরের ৩০ জুলাই বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করে এতে ৪৭টি দরখাস্ত জমা পড়ে।

শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিরোধের বিষয় বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে।

শিক্ষকদের একটি পক্ষ বলছেন, বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল জেনেট্রিক্স অ্যান্ড প্ল্যান ব্রিডিং স্ট্রিমের কিন্তু প্রশাসন তাদের ‘নিকট’ আত্মীয়দের নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে জেনেট্রিক্স অ্যান্ড প্ল্যান ব্রিডিং অবলিক দিয়ে এগ্রিকালচারাল কেমিস্ট্রি করা হয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট একজন শিক্ষকের স্ত্রীকে নিয়োগ দিতে সংশোধন করা হয়েছে। এছাড়া বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের স্ত্রীকে কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়ার শর্তে তিনি প্রশাসনের সঙ্গে একট্টা হয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন।

স্ত্রীর চাকরির বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রী অফিসার পদে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। ভাইভাও দিয়েছেন। কিন্তু আমি বিএনপিপন্থি শিক্ষক, ডিন ছিলাম অনুষদের। আমার স্ত্রীর চাকরি দেবে না।

অন্য পক্ষটি বলছে, অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের পর বিভাগের সভাপতি হবেন অধ্যাপক মু. আলী আসগর। তিনি (আলী আসগর) চান যেকোনো মূল্যে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে। এর জন্য তিনি হাইকোর্টে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। যার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফের নিয়োগ প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু করায় তিনিসহ প্ল্যানিং কমিটির অন্য দুইসদস্যকে নিয়ে নিয়োগ ঠেকাতে প্ল্যানিং কমিটির মিটিংয়ে আসছেন না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এমএ বারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।