ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

আনন্দসাগরে ভাসছে দেশসেরা রাজউক

মুরসালিন হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১১
আনন্দসাগরে ভাসছে দেশসেরা রাজউক

ঢাকা: শিক্ষার্থীদের তুমুল চিৎকার, হর্ষধ্বনি আর আর মাঠজুড়ে আনন্দময় এলেমেলো ছোটাছুটিতে বোঝা যায় রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এ বছর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় সারাদেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।

দুপুর নাগাদ পুরো স্কুল প্রাঙ্গণজুড়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মুহুর্মূহু ‘রাজউক’, ‘রাজউক’ স্লোগানে কানে তালা লাগার যোগাড়।

এর মাঝেই শিক্ষার্থীরা নিজেরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ করছে। কেউ কেউ আবার নতজানু হয়ে সালাম করছে শিক্ষকদের। গর্বিত বাবা-মায়েরাও নিজস্ব ভঙ্গিতে প্রকাশ করছেন আনন্দ।

এ বছর এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৩৯ শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ছাত্র ২০৫ এবং ছাত্রী ১৩৪। শতকরা ১০০ ভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০৪ জন শিক্ষার্থী, যা শতকরা ৮৯ দশমিক ৬৭ ভাগ।

জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ইকরাম হাসানকে ভালো ফলাফলের রহস্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বললো, আমার ভালো রেজাল্টের জন্য আমার শিক্ষকদের পাশাপাশি মা-বাবাও অনেক কষ্ট করেছেন।

শিক্ষকদের অবদানের ব্যাপারে ইকরাম জানায়, শিক্ষকরা প্রতিটি বিষয়ের অধ্যায়গুলো অত্যন্ত যত্নের সাথে পড়িয়েছেন। এছাড়াও আমাদের যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই শিক্ষদের সাহায্য পেয়েছি।

নতুন প্রক্রিয়ায় পরীক্ষার ব্যাপারে জানতে চাইলে সে জানায়, সৃজনশীল প্রশ্ন আগের পদ্ধতির তুলনায় অনেক সহজ করা হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষকরা আমাদের এ পদ্ধতির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি মনোযোগী ছিলেন।

কঠোর অধ্যবসায়ের কারণেই নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করে জিপিএ-৫ পাওয়া তানজীল মাহমুদ প্রীতি। শিক্ষকদের পাশাপাশি বাবা-মায়ের অবদানকেই সে প্রধান বলে মনে করে।

প্রীতি বলে, ভালো ফল করার কারণে বাবা-মাকে খুশি করতে পেরেছি, আর তাই নিজের অনেক আনন্দ লাগছে। বাবা-মা সবদিক দিয়ে আমাকে সাপোর্ট করেছে। পড়ালেখা বিষয়ে আমার যত সমস্যা ছিল তা সমাধানের জন্য তারা চেষ্টা করেছে।

জিপিএ-৫ পাওয়া প্রিয় পৃথ্বী প্রতীম বলে, অনেক পরিশ্রমের রেজাল্ট পেলাম আজ। খুব ভালো লাগছে। শিক্ষকদের পাশাপাশি মা-বাবাকেও এই পরিশ্রমের অংশীদার মনে করি আমি।

প্রতীম বলে, সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ার কারণে পুরো বই আমাদের মুখস্থ করতে হয়নি। শিক্ষকরা আমাদের অধ্যায়গুলো পরিপূর্ণভঅবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ফলে সৃজনশীল প্রশ্নের ব্যাপারে কোন একটা সমস্যাই হয়নি।

গর্বিত অভিভাবক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পৃথিলা নাজনীন নীলিমা বলেন, এই প্রতিষ্ঠান প্রতিটি শিক্ষার্থীর পূর্ণ তত্ত্বাবধান করে। ছেলের ভালো রেজাল্টে অন্যান্য অভিভাবকদের মত আমিও খুব আনন্দিত। এমন একটি ভালো ফলাফল করবে এই আশাতেই মূলত রাজউকে ছেলেকে ভর্তি করিয়েছিলাম। সেই প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার কারণে আমি প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ দিতে চাই।

প্রতিষ্ঠান প্রধানের কথা : রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম হোসাইন সারোয়ার মনে করেন শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টা, শিক্ষকদের নিরলস পরিশ্রম এবং অভিভাবকদের সচেতনতা-এই তিনের সফল সমন্বয়ের কারণেই ভালো ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এটাই প্রথম সার্টিফিকেট পরীক্ষা। তাছাড়া এখানে প্রশ্নের কিছুটা ভিন্নতা ছিল। তবে নতুন ধরণের পদ্ধতির ব্যাপারে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বোঝানো হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক মডেল টেস্টও নেওয়া হয়েছে। এসবের ফলে শিক্ষার্থীদের মনের ভেতর থেকে ভীতি সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব হয়েছে।

ভালো ফলাফলের জন্য কি ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল জানতে চাইলে প্রিন্সিপাল বলেন, এখানে  শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া হত। সময়মতো সিলেবাস শেষ করারও একটা চেষ্টা ছিল শিক্ষকেদর মধ্যে। প্রতিটি বিষয়ে এ প্লাস প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে শিক্ষকরা কঠোর দেখভাল করেছেন। এছাড়াও তুলনামূলকভাবে দুর্বলদের প্রতি অধিক মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল। এসব পরিকল্পনার কারণে উঁচুমানের এই ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়েছে।

সবশেষে প্রিন্সিপাল বলেন, প্রথম যখন হয়েছি, এখন এই অবস্থান থেকে আর পিছিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ভবিষ্যতেও এমন ফলাফল ধরে রাখাই এখন আমার এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।