ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষাক্ষেত্রে ঘটনাবহুল বছর

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১১
শিক্ষাক্ষেত্রে ঘটনাবহুল বছর

ঢাকা: শিক্ষা ক্ষেত্রের জন্যে ঘটনাবহুল বছর ছিল ২০১১ সাল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষার উন্নয়নে বেশ কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এ বছর।

আবার কিছু ঘটনা কলুষিত করেছে শিক্ষাঙ্গনকে।

বছরের সবচেয়ে শোকের ঘটনাটি ছিল ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের মায়ানী গ্রামে একটি বাস দুর্ঘটনায় ৪৩ ক্ষুদে শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যু। সমগ্র শিক্ষা পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে এ ঘটনায়। দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীরা সবাই ছিল ৩য় থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
 
বছরের শেষ দিকে জাতীয়করণের দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন ব্যাপক সাড়া ফেলে। নভেম্বর মাসে ঘোষণা দিয়ে ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ থেকে কয়েক হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের অবস্থান কর্মসূচি হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এক পর্যায়ে ২৭ ডিসেম্বর শিক্ষকরা আত্মাহুতির ঘোষণা দিলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিন তাদের আশ্বাস দিয়ে বাড়ি ফেরান।
 
কিন্তু আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে চাকরি জাতীয়করন করা না হলে স্কুলগুলোতে তালা ঝুলবে বলে ঘোষণা দিয়েই মাঠ ছাড়েন তারা।
   
মে মাসের ৩ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরীকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রথবারের মতো ইউজিসি চেয়ারম্যানকে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় এ নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যে ছিল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।  

অধ্যাপক আজাদ চৌধুরীকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়।
 
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের একটি ধারায় নিজস্ব উৎস থেকে অর্থায়নের প্রস্তাব অনুযায়ী ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও বেতন ফি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। এ ধারার বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। অবশেষে সরকার থেকে আশ্বাস পেয়ে মাঠ ছাড়ে তারা।
 
বছরের মাঝামাঝি সময়টায় শিক্ষাঙ্গনের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। দেশের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষকের অপকর্মে হতবাক হয় পুরো জাতি। প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা শাখার দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানটিতে অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে চাকরিচ্যুত ও গ্রেপ্তারও করা হয়।
তবে কিছু ছাত্রী ও অভিভাবক ঘটনার বিচারে কালক্ষেপণের অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমের পদত্যাগের দাবি শুরু করেন।
 
এরপর জুলাই মাসের ১৩ তারিখে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এবং ১৫ জুলাই নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন মঞ্জু আরা বেগম।
 
১২ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেণীকক্ষ ও পরীক্ষার হলে শিক্ষকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। যা সকল মহলে প্রশংসা পায়।
 
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো কোনো শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে ও পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন বলে চাইল্ড পার্লামেন্টে পাওয়া এক অভিযোগের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষামন্ত্রী।
 
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন। জাহাজ নির্মাণ ছাড়াও নেভাল আর্কিটেকচার, মেরিটাইম সেফটি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ব্যবস্থাপনা, পোর্ট, শিপিং ও কোস্টাল ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমএসসি ও পিএচইডি ডিগ্রি থাকবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে টেকনোলজি কলেজ থেকে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর ছিল বড় ঘটনা। ১৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয় টেক্সটাইল কলেজকে।
 
বছরের প্রথম ফলাফল ছিল এসএসসি পরীক্ষার। ১২ মে প্রকাশিত ফলাফলে পাসের হার ৮২ দশমিক ৩১। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭৬ হাজার ৭৪৯ জন।

১৫ জুলাই প্রকাশিত হয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক শূণ্য ৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন।

এর দুদিন আগেই প্রকাশিত হয় প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফল। ক্ষুধে শিশুরাও নিজেদের ২০১০ সালের রেকর্ড ভেঙে পাসের হারে নতুন রেকর্ড করে ৯৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। এবতেদায়ীতে এ হার ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

বছরের সর্বশেষ পাবলিক পরীক্ষার জুনিয়র স্কুল সার্টিফেকিট পরীক্ষা-জেএসসি এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা-জেডিসি’র ফল প্রকাশ হয় ২৮ ডিসেম্বর। ২০১০ সালের ফলাফলের চেয়ে প্রায় ১৭ ভাগ বেশি পাসের হার ছিল এ বছর। দুই পরীক্ষার গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক সাত এক শতাংশ। জেএসসি পরীক্ষার পাসের হার ৮২ দশমিক ছয় সাত শতাংশ এবং জেডিসি পরীক্ষার পাসের হার ৮৮ দশমিক সাত এক শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৩০ হাজার ৮৫২ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।