ঢাকা: জার্মানিতে প্রি-স্কুলিং থেকে প্রাথমিক শিক্ষা হয়ে সেকেন্ডারি এডুকেশন পর্যন্ত স্তরসমূহে কোনো পাবলিক পরীক্ষা নেই। শিক্ষকরাই ক্লাস অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে থাকেন।
জার্মান শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি-বেসরকারি স্কুলভেদে পাঠক্রমের কোনো তারতম্য হয় না। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে পাঠক্রম অনুমোদন করে থাকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাই পড়াতে হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা গঠিত উন্মুক্ত মঞ্চ ও এডুকেশন একাডেমি আয়োজিত ধারাবাহিক আয়োজনের দ্বিতীয় ওয়েবিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
'শিক্ষায় মডেল রাষ্ট্রের সন্ধানে: প্রসঙ্গ জার্মানি' শিরোনামে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজিম উদ্দীন আহম্মেদ ধনু।
আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. এ জেড এম শফিউল আজম। ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জার্মানির বন ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পরিচালক ও গবেষক ড. মারুফ মল্লিক। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ড. কাজী জাকির হোসেন।
প্রবন্ধ উপস্থাপক তার উপস্থাপনায় জার্মানির শিক্ষা ব্যবস্থার বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, সেখানে পাঁচ স্তরের শিক্ষা কাঠামো বিদ্যমান। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার পূর্বে বাচ্চাদের প্রি-স্কুলিং শিক্ষা প্রদান করা হয়। ছয় বছরের কম বয়সী বাচ্চারাই মূলত প্রি-স্কুলিং এর আওতায় আছে।
প্রবন্ধে বলা হয়, জার্মানিতে প্রি-স্কুলিং থেকে প্রাথমিক শিক্ষা হয়ে সেকেন্ডারি এডুকেশন পর্যন্ত স্তরসমূহে কোনো পাবলিক পরীক্ষা নেই। শিক্ষকরাই ক্লাস অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে থাকেন। জার্মান শিক্ষা ব্যবস্থার বিশেষ দিক তুলে ধরতে গিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপক বলেন, সেখানে সরকারি-বেসরকারি স্কুলভেদে পাঠক্রমের কোনো তারতম্য হয় না। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে পাঠক্রম অনুমোদন করে থাকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাই পড়াতে হয়। কেউ যেমন পাঠক্রমের অতিরিক্ত কিছু পড়াতে পারে না আবার কেউ পাঠক্রমের কোনো অংশ বাদ দিতে পারে না। সাধারণ শিক্ষায় যারা ভাল করতে ব্যর্থ হয় জার্মান শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের জন্য কারিগরী শিক্ষা নিশ্চিত করে থাকে।
প্রবন্ধ উপস্থাপক জার্মান শিক্ষা প্রশাসন ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি তুলে ধরে বলেন, জার্মানিতে ক্যাডার সার্ভিস বলে কিছু নেই। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা যেকোনো মন্ত্রণালয়ের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের নিয়োগ প্রদান করে থাকে। তাছাড়া, জার্মান সরকার শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যয় করে থাকে। একজন শিক্ষার্থীর প্রাথমিক শিক্ষা থেকে টারশিয়ারি শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার গড় হিসাবে ১৩ হাজার ৫২৯ ডলার খরচ করে থাকে। জার্মানিতে প্রাথমিক শিক্ষায় ১২ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ২ জন শিক্ষক এবং সেকেন্ডারিতে ১২ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক আছেন।
প্রবন্ধ উপস্থাপক উল্লেখ করেন যে, আজ পর্যন্ত জার্মানি থেকে ৮০ জন বিজ্ঞানী, গবেষক নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন, যা জার্মান শিক্ষা ব্যবস্থারই ফল।
প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যে গবেষণায় নেতৃত্ব দিতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ জার্মানি। জার্মানির শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি প্রসঙ্গক্রমে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা নিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করা, এ কাজে তিনি গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে কাজে লাগানোর কথা বলেন।
বাংলাদেশ শিক্ষায় জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ খরচ করা হয় উল্লেখ করে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এতো অপ্রতুল বরাদ্দ দিয়ে বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণা সম্ভব না। তিনি আলোচনায় মানবিক শিক্ষা, বাংলাদেশের সুপ্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অর্জনের কথা তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ময়মনসিংহ-১১ আসনের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দীন আহম্মেদ ধনু শিক্ষা ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের অর্জনসমূহ তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই উপহার, উপবৃত্তি, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন বর্তমান সরকারের অনন্য উদ্যোগ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। তিনি করোনাকালে অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখায় শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানান। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের উদ্যোগে এ ধরণের ওয়েবিনার আয়োজনের জন্য ধন্যভাদ জানান।
ওয়েবিনারটিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত বিভিন্ন দপ্তর ও সরকারি কলেজের কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সুধীজন সংযুক্ত হন। লাইভ স্ট্রিমিং-এ যুক্ত হয়ে ওয়েবিনারটি উপভোগ করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী ছয় মাস ব্যাপী মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, দেশ-বিদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা প্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ে ওয়েবিনার আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২১
এমআইএইচ/এমএমএস