ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

‘অটোপাস’ থেকে মুক্তি!

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২
‘অটোপাস’ থেকে মুক্তি! এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের উল্লাস | ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: সিলেবাস ও সময় কমিয়ে পরীক্ষা নেওয়ায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ভালো ফল হয়েছে। মহামারির কারণে পরীক্ষা না নেওয়ায় গত বছর ছিল শতভাগ পাস, এবার তা ৯৫ ভাগ।

এবার বেড়েছে জিপিএ-৫।

পাসের হার এবং জিপিএ-৫ বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং শিক্ষাবিদ ও সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান বলছেন, কম বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ে যে ফল দেওয়া হলো, তাতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। এছাড়াও উচ্চশিক্ষা স্তরে ভর্তিতেও জট সৃষ্টি হবে।

জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা বেড়ে যাওয়ায় ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করারও চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন রাশেদা কে চৌধুরী।

রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী পেয়েছেন জিপিএ-৫। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার ২৭ হাজার ৩৬২ জন বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

এ বছর ১১টি বোর্ডে গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। সাধারণ ৯টি বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

পাসের হার নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় রাশেদা কে চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ফলাফল প্রত্যাশিত ছিল।

করোনার কারণে গতবছর এইচএসসি পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি-সমমানের পরীক্ষার ফল থেকে মূল্যায়ন করা হয়। ফলে সেবার পাসের হার ছিল শতভাগ। পরীক্ষা না নিতে পারায় ২০২০ সালের উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ‘অটোপাস’ ব্যাচ নামে ডাকে অনেকেই।

এ বিষয়ে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এবার শিক্ষার্থীরা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটা ধাপ আনুষ্ঠানিক ধাপ অতিক্রম করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে ফলাফল প্রকাশ করা হলো। অটোপাস থেকে তো পরিত্রাণ হলো। পরীক্ষা দিয়েছি পাস করেছে। আপদকালীন স্বাভাবিক কিছু করতে পারবেন না। সে কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে।

এবার ২৭ হাজার বেশি শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পাওয়ায় তাদের ভর্তি নিয়ে প্রত্যাশার চ্যালেঞ্জ দেখছেন শিক্ষাষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী।

তিনি বলেন, এখন আগামীর চ্যালেঞ্জ দেখতে হবে। সাধারণভাবে মনে হয় আসন সংকট নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে ভালো প্রতিষ্ঠানে যেতে। সেখানেই হোঁচট খাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আগামীর জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে উদ্যোক্তা হতে হবে।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আসন সংকটে যারা প্রত্যাশিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে না। তারা যেন অন্য সুযোগ নেয়। প্রযুক্তি অনেক সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগ তাদের খুঁজতে হবে।

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ায় গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান।

তিনি বলেন, যে পরীক্ষা হলো সেটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য, কারণ সিলেবাস শর্ট করে প্রশ্ন সংখ্যা বাড়িয়ে কম সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়েছে। যে চ্যাপ্টারগুলো থেকে প্রশ্ন করা হলো, সেখানে অল্প পড়েই উত্তর দিতে হলো। এটা শুভঙ্করের ফাঁকি।

মূল বিষয় ইংরেজি ও বাংলা বাদ দিয়ে পরীক্ষা নিলেন, আমাদের ধারণায় কোনো ছাত্র যদি ভাষায় দুর্বল হয় সে অন্য বিষয়ে ভালো করতে পারে না। তাহলে সার্কিভাবে যে পরীক্ষা হলো সেটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করা হলো, প্রশ্ন তোলেন সিদ্দিকুর রহমান।

এই শিক্ষাবিদ বলেন, পরীক্ষার যথার্থতা এবং নির্ভরযোগ্যতা থাকতে হয়। কিন্তু এই পরীক্ষায় যথার্থতা এবং নির্ভরযোগ্যতা হলো না। যারা কম পড়ে প্রকৌশলী, মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে ওখানে গিয়ে ধাক্কা খাবে। শুধু পাস করিয়ে দিলেই হবে না, যোগ্যতা অর্জন করিয়ে পাস করিয়ে দিতে হবে। সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।

সমাধান কী ছিল, প্রশ্নে তিনি বলেন, যে যে ক্লাসে আছে তাকে সে ক্লাসে রেখে কোর্স কমপ্লিট করে দিলে সারাদেশে কেউ এগিয়ে বা পিছিয়ে পড়ার সুযোগ পেত না।

তিনি আরও বলেন, গতবার যারা অটোপাস, তারা তো এখনও ভর্তি শেষ করতে পারেনি। এখন যারা পাস করলো তারা বসে থাকবে। পরীক্ষা না নিয়ে পড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া যেত। জট বেঁধে গেল।

পরীক্ষা নিয়ে কোনো রকম সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে শিক্ষার গুণগতমানকে প্রভাবিত করা হলো, তাতে শিহরিত হওয়ার মতো অবস্থা বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ সিদ্দিকুর রহমান।

তবে পাস ও জিপিএ-৫ বৃদ্ধি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে আগের নম্বর যোগ হয়ে পাসের হার বেড়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কম বিষয়ে পরীক্ষা হওয়ায় আমাদের সন্তানেরা অনেক বেশি ভালো প্রস্তুতি নিয়ে ভালো ফল করেছে।

ভালো ফলাফলে আমরা এত অসন্তুষ্টি হই কেন, প্রশ্ন রেখে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা কি চাই না যে, আমাদের সন্তানেরা ভালো করুক? এমন কি কোনো দিন আসবে না যেদিন আমাদের কেউই অনুত্তীর্ণ থাকবে না, সবাই ভালো করবে সবাই উত্তীর্ণ হবে?

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।