রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে তিন ঘণ্টা মারধর ও নির্যাতনের শিকার হয়ে এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের সময় দুই ছাত্রলীগ নেতা মিলে তার ডেবিট কার্ড থেকে ৪৫ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী বাড়ি থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি অভিযোগপত্র বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দফতরে পাঠিয়েছেন। প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি অভিযোগ এসেছে। এ ঘটনা তদন্তে আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছি।
ভুক্তভোগী তথ্য ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আল-আমিন। তার বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলায়। তার চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন- ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা। দুজনেই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী। গত ১৯ আগস্ট মতিহার হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে।
অভিযোগপত্রে আল-আমিন জানান, তিনি ১৭ আগস্ট পরীক্ষায় অংশ নেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা তাকে রবীন্দ্রভবন থেকে বঙ্গবন্ধু হলের ৩৩১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর সেখানে মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ ওরফে শশীসহ কয়েকজন আসেন। পরবর্তীতে মুমিনুর তার মাথায় দুই লিটার পানির বোতল ও লাঠি দিয়ে আঘাত করলে একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে যান। এ সময় তার মোবাইল ফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেন তারা। জ্ঞান ফেরার পর রাত ৮টার দিকে জোরপূর্বক তার ডেবিট কার্ড নিয়ে গিয়ে ৪৫ হাজার টাকা তোলেন সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা।
অভিযোগের বিষয়ে মুমিনুর রহমান বলেন, আল-আমিনসহ আরও কয়েকজনকে তাদের দুরবস্থার সময় তিনি চাকরি দিয়েছিলেন। এক-দেড় বছর চাকরি করার পর আল-আমিন বললেন, তিনি বিসিএস পরীক্ষা দেবেন। আল-আমিন চলে যান। কিন্তু তারা কয়েকজন গিয়ে আরেকটি কোম্পানি খোলেন। সেখানে তার কোম্পানির ক্লায়েন্টদের নিয়ে নিচ্ছেন তারা। এতে তার ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে ১৭ আগস্ট বিষয়টির সুরাহার জন্য কথা বলতে বসেছিলেন। তাকে কেউই মারধর করেননি।
৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মুমিনুর রহমান বলেন, সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা আলোচনার সময় ছিলেন। কিন্তু পরে কী হয়েছে, এটা তিনি বলতে পারবেন না।
আল আমিন জানান, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ শশী ও তাকি আহমেদের সঙ্গে কয়েক মাস ফ্রিল্যান্সিং ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’-এর কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু মনোমালিন্য হওয়ায় বছরখানেক আগে তিনি কাজ ছেড়ে দেন। এ কাজের জন্য তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তিপত্র ছিল না। তারা জোরপূর্বক মিথ্যা জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেন এবং সেটির ভিডিও ধারণ করেন। তারা হুমকি দিয়ে বলেন, তাদের কথার বিপক্ষে কোনো কথা বললে এবং কোনো পদক্ষেপ নিলে তাকে মেরে ফেলা হবে। তাই তিনি জীবন বাঁচানোর জন্য তারা যা বলেছেন, তাই করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ও মতিহার হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা বলেন, আমি কারো ডেবিট কার্ড থেকে টাকা উঠাইনি। আমার বিরুদ্ধে কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ করছে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্তের মোবাইল ফোনে কয়েক বার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, মুমিন ও শশীর অধীনে আল-আমিন মূলত একটা চাকরি করতো। চাকরি সূত্রে তাদের কিছু ডকুমেন্ট সরিয়ে নেয় আল-আমিন। তাই তারা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিষয়টি জানালে আমি আল-আমিনের সঙ্গে কথা বলি এবং সে স্বীকার করে তার জন্য কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ যতটা সম্ভব পূরণের বিষয়ে সম্মত হয় আল-আমিন। এখানেই বিষয়টা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে এতদিন পর সে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। এছাড়া তার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২২
আরএ