ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে থাকা না থাকা নিয়ে কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, এটা নিয়ে যেন টানাহেঁচড়া না হয়, যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি তাই আমরা প্রযুক্তিবিদদের মতামত নিয়েছি।
রোববার (০৮ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন রাশেদা সুলতানা।
ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোটগ্রহণ ব্যবস্থায় এনআইডি ও ভোটার নম্বর ব্যবহার বিষয়ক মতবিনিময় সভায় শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, অধ্যাপক হায়দার আলী, ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে কেউ কেউ ইসির অধীনেই এনআইডি থাকার পক্ষে। কেউ কেউ থাকার পক্ষে না। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো জানার জন্য বসেছিলাম। এখন আমরা নিজেরা বসবো। বসে তারপর সিদ্ধান্ত নেবো। জিনিসটা যাতে সঠিক হয়, আমরা যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি এজনই প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বসেছিলাম।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনআইডি নিয়ে টানাহেঁচহড়া যাতে না হয় বা গ্রহণযোগ্যতা পায় এইজন্যই ওনাদের সঙ্গে বসা। আমরা আলোচনা করি, বসি, তারপর কতটা খারাপ-ভালো হবে বলতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, আমরাও আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করবো। এখন কিছুই বলবো না। এনআইডি থাকা না থাকা নিয়ে কোনো সংকট নেই।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, যেহেতু সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনআইডি ওনারা করবেন। আর ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, এটা ওনারা করেছে, এটা এখানে থাকাই ভালো। তাই এটা নিয়ে প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমাদের কর্মকর্তারা আমাদের কাছে একটা স্মারলিপি দিয়েছিলেন এবং যুক্তি তুলে ধরছিলেন যে, ইভিএমে ভোট হলে এবং মন্ত্রণালয়ে এনআইডি চলে গেলে ভোট নিতে সমস্যা হতে পারে। যেহেতু বিষয়টা টেকনিক্যাল, তাই আইটি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ও মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা সেগুলো শুনেছি। আমরা কোনো মতামত দেইনি।
তিনি বলেন, ওনারা স্পষ্টভাবে চারজন যেটা বলেছেন, টেকনিক্যালি কোনো সমস্যা হবে না। কারণ হলো, সার্ভার তো আমাদের কাছেই থাকছে। এটা কোনো সমস্যা না। ওনাদেরা মিশ্র বক্তব্য আসছে। একজন বলেছেন এটা তো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। আপনারা কেন বাড়তি দায়িত্ব নিতে যাবেন? ইসির কাজ হলো ভোটার তালিকা করা, সুষ্ঠু নির্বাচন করা। এটা তো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কাজেই না থাকাই ভালো।
কেউ বলেছেন, যেহেতু এটা সরকারেরই কাজ, তাই সরকার চাইলে নিতে পারে। তবে যেহেতু ইসি এটা করে আসছে দক্ষতার সঙ্গে, এক্ষেত্রে কমিশনের কাছেই যদি দক্ষতার সঙ্গে রাখা যায়। এখন অন্য কেউ কাজ করবে, সময় লাগবে, এতে মানুষ যে সার্ভিস পাচ্ছে, এটা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই সরকারকে যদি কনভিন্স করা যায় যে, আপনারা চাইলে নিতে পারেন, তবে এটা এখানে থাকলে ভালো হয়।
ওনারা আরও বলেছেন, ইভিএমে যেখানে ভোট হবে সেখানে শুধু এনআইডি ইনসার্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে নামটা চেঞ্জ করে ভোটার কার্ড করে দেবেন। যেহেতু অনেক মানুষ সার্ভিস নেওয়ার জন্য এনআইডি নেয়, এতে ভোটার হাওয়ার আগ্রহ কমে যেতে পারে। তবে ভোট সুষ্ঠু হলে ভোটার হওয়ার আগ্রহ কমে যাবে না।
সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, আমরা ওনাদের কথা শুনেছি। এখন বসে (কমিশন বৈঠক) সিদ্ধান্ত নেবো। সিইসি বলেছেন, আমরা যেটাই করি না কেন, যুক্তিযুক্ত হবে। কোনো পক্ষপাক্ষিত্ব হবে না। যেটা বেটার, যেটা লজিক্যাল সেটা করবো। সরকারের চাওয়া লজিক্যাল হলে চলে যাবে। আর না হলে আমাদের যুক্তি তুলে ধরবো।
প্রসঙ্গত, সরকার এনআইডি কার্যক্রম ইসির কাছ থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৩
ইইউডি/এমজেএফ