ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩২, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

ভোটের অনিয়ম ঠেকাতে সামাজিক কমিটি গঠনের পরামর্শ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৪৩, অক্টোবর ৬, ২০২৫
ভোটের অনিয়ম ঠেকাতে সামাজিক কমিটি গঠনের পরামর্শ কালের কণ্ঠ’ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ।

ঢাকা: আগামী এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ঠেকাতে সামাজিক কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে পরিস্থিতি নজরদারির পরামর্শ দিয়েছেন ‘কালের কণ্ঠ’ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ। তিনি বলেন, যে কমিটিতে রাজনৈতিক দলের কেউ থাকবে না।

সোমবার (৬ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন।

হাসান হাফিজ বলেন, প্রথমেই আপনাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আপনেরা মেরুদণ্ড সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে জাতির কাছে পৌঁছাবেন। পুলসিরাতের মধ্যে আপনারা আছেন। আমরা চাইবো আপনারা সেই রকম দৃঢ়তার পরিচয় দেবেন। দেশপ্রেমের পরিচয় দেবেন, অঙ্গীকারের পরিচয় দেবেন। আমরা জানি যে, পাশের দেশ ভারতে একজন জাদরেল সিইসি ছিলেন। তার জন্য কিন্তু কাঁপতো ভারত। আমাদের দেশের যে ইতিহাস সেটা খুবই মর্মান্তিক। আর অতীতে নির্বাচনগুলো যারা পরিচালনা করেছেন তারা এখন কাটগড়ায় দাঁড়াচ্ছেন। আপনাদের সামনেও কিন্তু সেই আশঙ্কাটা আছে। সুতরাং আপনারা ডু অর ডাই।

তিনি বলেন, এ রকম সুযোগ আমরা পাই না। যেরকম ছাত্র-জনতার যে সর্বব্যাপী যে অভ্যুত্থান হয়েছে তাদের রক্তের সঙ্গে আমরা যেন বেঈমানি না করি। সেটা আপনাদের কাছ থেকে আমরা আশা করবো। আপনারা ব্যক্তি মানুষ নন। আপনারা কিন্তু আমরা দর্পণ, আপনারা হচ্ছেন অক্সিজেন। আপনাদের ছাড়া দেশের স্থীতি আসবে না। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাটা সফল হবে না। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চার লালন, বিকাশ কিছুই হবে না। এ রকম যে আমরা সুযোগ পেয়েছি একটা দেশকে নতুন করে গড়ার। এটা হয়তো পঞ্চাশ বছর, একশো বছরে আসবে না। হয়তো ভবিষ্যতে এর থেকেও ভয়ংকর স্বৈরাচার আমাদের কাঁধে চেপে বসতে পারে। সুতরাং এখনই সময় সেই রকম দৃঢ়তার পরিচয় দেওয়া। আমরা আপনাদের কাছে সেটা আশা করবো।

তিনি আরও বলেন, ষড়যন্ত্র আছে, নির্বাচনটাকে নস্যাৎ করার জন্য দেশের ভেতরে আছে, দেশের বাইরে আছে। আপনাদেরকে এটা গ্রহণযোগ্য করার জন্য যে আওয়ামী লীগ যেটার কার্যক্রম নিষিদ্ধ আছে, সেটার ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য আমরা জানতে চাই। না হলে তো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আওয়ামী লীগের ভোটারদের তো আপনি বাদ দিতে পারবেন না। তারা তো দেশের নাগরিক। তারা যদিও অনুশোচনা করেনি, এখনো পর্যন্ত, প্রায়শ্চিত্ত করেনি, অনুতপ্ত হয়নি। কিন্তু তারপরেও তাদের এ তাদেরকে বাদ দিয়ে তো নির্বাচনটা হতে পারে না। তো সেই ব্যাপারে আপনাদের সুস্পষ্ট অবস্থান জাতির কাছে পরিষ্কার করবেন। আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে পরিষ্কার করবেন।

হাসান হাফিজ বলেন, এত বড় নির্বাচন, এটা কিন্তু শুধু সেনাবাহিনী, শুধু নির্বাচন কমিশন, শুধু আমলাতন্ত্র, পুলিশ, আনসার, র‌্যাব তাদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। আমি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করতে চাই যে, প্রত্যেকটা নির্বাচনী এলাকায় আমরা যদি একটা কমিটি করি একদম ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত। রাজনৈতিক নেতাকর্মী বাদ দিয়ে সামাজিক শক্তি যারা আছে পেশাজীবী, ধরেন, একটা এলাকার গণ্যমান্য শিক্ষক যারা সবাই মুরুব্বি। যারা রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও তরুণদের নিয়ে একটা যদি আমরা কমিটি করি। সেই কমিটি নজরদারি করবে এবং সবকিছুর নজরদারি করবে। আপনি যদি যুক্ত করেন, সম্পৃক্ত করেন তাহলে দায়িত্ববোধটা কিন্তু বাড়বে। আপনাদের কাজটা অনেকাংশে হালকা হয়ে আসবে। সবাইকে যদি এটার সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন তাহলে এটা একটা বড় জিনিস হতে পারে। এটা আপনাদের মোটিভেট করতে পারেন। এটা একটা চিন্তার মধ্যে রাখতে পারেন।

তিনি আর বলেন, এছাড়া সাইবার বিষয়টার নজরদারিটা আপনাদের বাড়াতে হবে। কারণ, যে রকম প্রোপাগান্ডা এখন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআই দিয়ে হচ্ছে, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তো সেটার নজরদারিটা বাড়াতে হবে, সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে আপনারা কিন্তু বিদেশি সহায়তাও পাবেন। এরই মধ্যে কিছু পেয়েছেন। আপনাদের সক্ষমতা আছে।

কালের কণ্ঠের সম্পাদক বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি প্রবাসীরা আমাদের চেয়ে বেশি দেশপ্রেমিক। তাদের রক্তে, ঘামে, শ্রমে কিন্তু বাংলাদেশ একটা দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। সুতরাং তাদের আমরা যেন যথাযথ সম্মান করি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজের সঞ্চালনায় সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

ইইউডি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।