ঢাকা: আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন প্রার্থীদের অবহিতকরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
প্রার্থীর যোগ্যতা
এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে অব্যশই বাংলাদেশি হতে হবে। মেয়র পদের জন্য পুরো সিটির কোনো একটি এলাকার ভোটার হতে হবে। আর কাউন্সিলর পদের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটার হতে হবে প্রার্থীকে।
প্রার্থীর অযোগ্যতা
নির্বাচনে প্রার্থীর অযোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করলে বা হারালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। এছাড়া কোনো আদালত থেকে অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হলে, প্রজাতন্ত্র বা সিটি করপোরেশন বা কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত থাকলেও প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হবেন।
এছাড়া আরও বেশ কিছু অযোগ্যতার বিষয় স্পষ্ট করেছে ইসি।
ক. সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনে সরকারকে পণ্য সরবরাহ করার জন্য বা কোনো চুক্তি বাস্তবায়ন বা সেবা কার্যক্রমের জন্য বা হিন্দু যৌথ পরিবারের সদস্য হিসেবে কোনো অংশ বা স্বার্থ আছে এ রূপ কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ থাকলে (এ বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে মূল আইন দেখে নিতে হবে)।
খ. প্রার্থীর পরিবারের কোনো সদস্য সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের কার্য সম্পাদনে বা মালামাল সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত থাকলে বা এর জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব থাকলে বা সিটি করপোরেশনের কোনো বিষয়ে কোনো প্রকার আর্থিক স্বার্থ থাকলে।
গ. বসবাসের নিমিত্ত গৃহ-নির্মাণের জন্য কোনো ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণ ব্যতীত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণ বা তার কোনো কিস্তি পরিশোধে খেলাপি হলে।
ঘ. কোনো কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার যার কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণ বা কোনো কিস্তি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখের পূর্ববর্তী এক বছরের মধ্যে পরিশোধে খেলাপি হলে।
ঙ. মনোনয়নপত্র জমাদানের দিনে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত কোনো ঋণ মেয়াদ উত্তীর্ণ অবস্থায় অনাদায়ী থাকলে।
চ. সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে গৃহীত কোনো ঋণ বা দায়-দেনা অপরিশোধিত থাকলে।
ছ. সিটি করপোরেশন বা সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনকে নির্ধারিত দায়কৃত অর্থ অপরিশোধিত থাকলে।
জ. জাতীয় সংসদ বা কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্য হলে।
ঞ. সিটি করপোরেশনে তহবিল তসরুফের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আদালত/ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হলে এবং কোনো আদালত কর্তৃক ফেরারি আসামি ঘোষিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।
এছাড়া সরকারি কর্মচারীর প্রতি ক্ষতি সাধনের হুমকি দেওয়া (দণ্ডবিধি ধারা ১৮৯), মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি করা (দণ্ডবিধি ধারা ১৯২), কোনো ব্যক্তিকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য উপহার গ্রহণ করা (দণ্ডবিধি ধারা ২১৩), সরকারি কর্মচারীকে তার কর্তব্য-কর্মে বাধা দেওয়ার উদ্দেশে ইচ্ছাপূর্বক আঘাত করা (দণ্ডবিধি ধারা ৩৩২), সরকারি কর্মচারীকে তার কর্তব্য-কর্মে বাধা দেওয়ার উদ্দেশে ইচ্ছাপূর্বক গুরুতর আঘাত করা (দণ্ডবিধি ধারা ৩৩৩), সরকারি কর্মচারীকে তার কর্তব্য সম্পাদন বাধা দেওয়ার উদ্দেশে আক্রমণ কিংবা অপরাধজনক বল প্রয়োগ করা (দণ্ডবিধি ধারা ৩৫৩), এ অপরাধগুলোর যে কোনো একটির কারণে আদালত থেকে বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত হলেও কোনো ব্যক্তি সিটি নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারবেন না।
এদিকে আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হয়ে দায় থেকে অব্যাহতি পেলে, কোনো ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে সাজাভোগের পর পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত হলে কোনো ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারবেন।
বিদেশি অনুদান বা তহবিল গ্রহণকারী বেসরকারি সংস্থার প্রধান কার্যনির্বাহী পদ থেকে পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণ বা পদচ্যুত হলে এবং এরপর তিন বছর অতিবাহিত হলেও প্রার্থী হওয়া যাবে। আবার সরকারি বা আধা সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কোনো সমবায় সমিতি ইত্যাদি থেকে নৈতিক স্খলন, দুর্নীতি, অসদাচরণ ইত্যাদি অপরাধের জন্য শাস্তিমূলকভাবে চাকরিচ্যুত হলে এবং এরপর পাঁচ বছর কাল অতিক্রান্ত হলেও প্রার্থী হওয়া যাবে।
মনোনয়ন ফরম সংক্রান্ত কিছু তথ্যাবলী
সিটি করপোরেশনের অন্য কোনো পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করলে মনোনয়ন ফরম বাতিল হবে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ঘোষণায় অবশ্যই প্রার্থীর স্বাক্ষর থাকতে হবে, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামায় স্বাক্ষর করতে হবে। এটি এফিডেভিটরূপে যথাযথভাবে পূরণ করে নোটারি পাবলিক অথবা ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর নিয়ে দাখিল করা আবশ্যক।
মনোনয়নপত্র ও হলফনামার সঙ্গে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের সম্ভাব্য উৎসের ও সম্ভাব্য ব্যয়ের বিবরণী সম্বলিত নির্ধারিত ফরম দাখিল করতে হবে।
যেসব কাগজপত্র বা দলিলালি সংযুক্ত করতে হবে
যথাযথভাবে পূরণকৃত মনোনয়ন ফরম (ইসি নির্ধারিত ফরম নম্বর-ক/ক-১/ক-২), অর্জিত সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি, বর্তমানে কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত আছেন কিনা তার বিবরণ, অতীতে আপনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোনো ফৌজদারি মামলার রেকর্ড আছে কিনা, থাকলে এর রায় কী ছিল তার বিবরণ, ব্যবসা বা পেশার বিবরণী (এটি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে)।
আয়ের উৎস বা উৎসমূহের বিবরণ, প্রার্থীর নিজের ও অন্যান্য নির্ভরশীলদের সম্পদ ও দায়ের বিবরণী, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে একক বা যৌথভাবে বা প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীল সদস্য কর্তৃক গৃহীত ঋণের পরিমাণ অথবা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হওয়ার সুবাদে ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণের পরিমাণ, জামানত বাবদ নির্ধারিত অর্থ জমাদানের চালান/ব্যাংক ড্রাফটের কপি, নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহ করার জন্য অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎস ও সম্ভাব্য ব্যয়ের বিবরণীও দিতে হবে।
এছাড়া নিজের ও নির্ভরশীলদের সম্পদের বিবরণী, ঋণ সংক্রান্ত তথ্যাদি, আয়কর রিটার্নের কপি ও আইটি-১০ই (সম্পদের বিবরণী), আয়কর পরিশোধের প্রমাণপত্র (আয়কর বিভাগ প্রদত্ত রসিদ) ও ১২ ডিজিটের টিআইএন সনদের কপিও বাধ্যতামূলকভাবেই জমা দিতে হবে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৩ জন। ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৭ এপ্রিল, মনোনয়ন বাছাই ৩০ এপ্রিল, রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ২ থেকে ৪ মে, আপিল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আপিল নিষ্পত্তি ৫ থেকে ৭ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারে শেষ সময় ৮ মে ও প্রতীক বরাদ্দ ৯ মে।
এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এতে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
গাজীপুর সিটির সর্বশেষ ভোট হয়েছে ২০১৮ সালের ২৭ জুন। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের ১১ মার্চ। আর ভোটগ্রহণ করতে হবে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। কেননা আইন অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ করতে হবে মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
ইইউডি/আরবি