ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ফেনী-১

খালেদা জিয়ার আসনে নৌকা নিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে নাসিম 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩
খালেদা জিয়ার আসনে নৌকা নিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে নাসিম 

ফেনী: জেলার সীমান্তবর্তী উত্তরের জনপদ ফেনী-১ আসনে জমে উঠেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ আসনে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সরকারের সাবেক আমলা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

নির্বাচনী মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অনেকটা নির্ভার হলেও রাতদিন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন তিনি। এদিকে এ আসনটিতে যারা লড়ছেন তারা যেমন রাজনীতির মাঠে নতুন তেমনি নির্বাচন ঘিরে নেই জনসম্পৃক্ততাও।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ফেনী-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রথিতযশা সাংবাদিক এবিএম মূসা। সেইবার নৌকা প্রতীক নিয়ে তার নির্বাচনী প্রচারণায় আসেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল। এরপর এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ আর কখনও জয়ী হতে পারেনি। ১৯৯১ সাল থেকে ফেনী-১ আসনে পৈত্রিক ভিটা সূত্রে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তার পৈত্রিক ভিটা হিসেবে এ জনপদে বিএনপির একটি জোয়ার তৈরি হয়েছিল। তারপর সর্বশেষ দুইবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মহাজোটের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।  

বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত। দলের নেতাদের ভাষ্যমতে, ফেনী-১ আসনে দীর্ঘদিন নিজ দলীয় প্রার্থী না থাকায় এ জনপদের আওয়ামী রাজনীতিতে কিছুটা স্থবিরতা নেমে এসেছে। অনেক নেতাকর্মী এ বিষয়ে হতাশ হয়ে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এবার দলীয় প্রার্থী নিয়ে ৫০ বছরের নির্বাচনী খরা কাটাতে চায় দলটি। এতে কোন ছাড় দিতে নারাজ নেতারা।

ফেনী-১ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৬ জন মনোনীত প্রার্থী থাকলেও তাদের ৫ জনই অপরিচিত। আলাউদ্দিন নাসিম ছাড়া এ আসনটিতে যারা লড়ছেন তাদের সবাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম নাম লিখিয়েছেন। ফলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আসনটিতে ফাঁকা মাঠেই নাসিম চৌধুরী গোল করবেন বলে ধারণা ভোটারদের।

এ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) প্রার্থী শাহরিয়ার ইকবাল। বিএনপি না থাকায় দেশের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ট্যাগ পাওয়া এ দল থেকে এবারই প্রথম তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাম লিখিয়েছেন। আসনটির অন্য প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজনের দুই-এক সারি পোস্টার ঝুলানো থাকলেও নেই নিয়মিত প্রচারণা ও নির্বাচনী কার্যক্রম।

এবার এ আসনে তৃণমূল বিএনপির মো. শাহজাহান শাজু সোনালি আঁশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশে প্রার্থী কাজী মো. নুরুল আলম মোমবাতি প্রতীক, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মাহবুব মোর্শেদ মজুমদার ছড়ি প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হাসেম চৌধুরী ঈগল প্রতীক নিয়ে ভোটে থাকলেও মাঠে নেই। এখন পর্যন্ত কোথাও তাদের প্রচারণা দেখা যায়নি। দেখা যায়নি নির্বাচনী ক্যাম্পও। এমনটিই জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, এ আসনে একমাত্র হেভিওয়েট প্রার্থী আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। নৌকার টিকেট পেয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া এ প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট ও নির্বাচনী ক্যাম্পে সরব রয়েছে আসনটি।

পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, নাসিম চৌধুরী জনপ্রতিনিধি না হয়েও এ এলাকায় এতোদিন অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। তার বিকল্প সাধারণ জনগণ কখনোই ভাববে না। অন্যান্য দলের প্রার্থীরা মাঠে কেন নেই সে বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে। ওইসব তাদের নিজস্ব বিষয়।

স্থানীয় ভোটার হাসিবুর রহমান বলেন, আলাউদ্দিন নাসিম ছাড়া অন্যদের চেনা তো দূরের কথা, এখনো নির্বাচনী মাঠেও খুব একটা দেখিনি। এখানে দলমত নির্বিশেষে নাসিম চৌধুরীকেই সবাই সমর্থন দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হওয়াই মানুষের প্রত্যাশা আমার কাছে। এ এলাকায় ১৯৭৩ সালের পর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হলেও আওয়ামী লীগের কেউ সংসদ সদস্য হয়নি। এখানের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল দলীয় একজন প্রার্থী নির্বাচনে আসুক। এর আগে এ এলাকার মানুষ সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী সব পেলেও কাছ থেকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে খুব একটা কাউকে পায়নি। এজন্য সাধারণ মানুষ চাচ্ছে, দীর্ঘদিন এলাকার উন্নয়নের সাথে জড়িত এমন একজন এমপি হোক।
 
তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে গত কয়েকদিনে ২৪টি পথসভা ও ৩০টির অধিক মহিলা সমাবেশ করা হয়েছে।  

এ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী শাহরিয়ার ইকবাল বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব এলাকায় প্রচারণায় গিয়েছি ভোটারদের ভালো সাড়া পেয়েছি। আশাকরি সাধারণ মানুষ কেন্দ্রে গেলে নির্বাচনে জয়লাভ করব।  

পরিসংখ্যান বলছে, ফেনী-১ আসনে মোট ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩১৫ জন। এদের মাঝে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪০ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৪ জন। অপরদিকে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১ জন।


বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা,ডিসেম্বর ২৮,২০২৩
এসএইচডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।