ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বাদশার ভরসা নৌকা, জঙ্গি ইস্যুতে বিব্রত মিনু

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮
বাদশার ভরসা নৌকা, জঙ্গি ইস্যুতে বিব্রত মিনু রাজশাহীতে নির্বাচনী প্রচারণায় দু'দলের প্রার্থীরা

রাজশাহী: রাজশাহী সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হচ্ছেন- মিজানুর রহমান মিনু। তারা দু’জন প্রথম ২০০২ সালের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন। 

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তারা দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন। বাদশাকে হারিয়ে সেবার জয়ী হন মিনু।

নবম সংসদ নির্বাচনে তাকে হারিয়ে বাদশা সংসদ সদস্য হন। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নবম সংসদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। গত ১০ম সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিনা ভোটে আবারও নির্বাচিত হন বাদশা।

অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও মুখোমুখি হয়েছেন চির প্রতিন্দ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী। তবে এবার রাজনৈতিক আবহ ভিন্ন। অনেকটা গোছালো মাঠে নৌকার ওপর ভরসা করে মহাজোটের প্রার্থী বাদশা যখন শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত। তখন জঙ্গি ইস্যুতে আবারও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন সাবেক সংসদ সদস্য মিনু।

সদ্যই গত হয়েছে টানা দুইবারের সংসদ সদস্য বাদশার দশবছর। সরকারের দুই মেয়াদের উন্নয়নের সঙ্গে যোগ হয়েছে জোটের প্রতীক ‘নৌকা’।  

তাই নৌকাই এখন বাদশার জয়ের ভরসা। এরই মধ্যে তার পক্ষে একট্টা হয়েছেন জোট নেতারা। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কনকনে শীত উপেক্ষা করে চলছে নৌকার বিরামহীন প্রচারণা। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বসে নেই। নিজ দলের প্রার্থী না থাকলেও জোটের প্রার্থীর জন্য জয়ের ভিশন নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। কারণ জোটের প্রার্থী এবারও নৌকায় চড়েছেন। তাই ভেদাভেদ ভুলে নৌকার জয়ের জন্য ভোটের মাঠে আবারও সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।  

শনিবার (২২ ডিসেম্বর) সকালেই তার পক্ষে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ১৪ দলের রাজশাহী সমন্বয়ক মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সংবাদ সম্মেলনে জোটপ্রার্থী বাদশার পক্ষে রাজশাহীর আগামী দিনের উন্নয়নের জন্য ৪৪ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এতে জাসদ ও জাতীয় পার্টিসহ জোটের অন্য শরিক দলের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।  

এছাড়াও বাদশাকে নিয়ে শুরু থেকেই জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এছাড়া খোদ নৌকায় মনোনয়ন নিয়ে বাদশার বিপক্ষে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারও এখন তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও উপস্থিত থকেছেন। তাই বলা যায় দ্বন্দ্ব ভেদাভেদ ভুলে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ।

রাজশাহী ১৪ দলের সমন্বয়ক লিটন বলেন, রাজশাহী-২ সদর আসনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ আসন। বিভাগীয় শহরের এ আসনটি আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চাই। সদরে মেয়রের সঙ্গে এমপির যদি জোড়া হয়, তবে উন্নয়নমূলক কাজ দ্রুত হবে। আর তা যদি কোনো কারণে তা না হয়, তবে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তাই বাদশাকে জয়ী করার জন্য আহ্বান জানান লিটন।

আর একই কথা বলছেন ফজলে হোসেন বাদশাও। তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হলে তা হবে রাজশাহীর উন্নয়নের স্বর্ণযুগ। মেয়র ও তিনি মিলে রাজশাহীকে এমন একটি পর্যায়ে নিতে যেতে পারবেন যা আর কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আরও একটি বার তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে, রাজশাহীতে ঐক্যফ্রন্টের দৃশ্যমান অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এর ওপর মহানগর ও জেলায় একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তাই দলের চেয়ারপারসনের ‍উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর প্রচারণায় আর সেভাবে সময় দিতে পারছেন না তারা। দলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন এবার রাজশাহী-৩ আসনের প্রার্থী। এছাড়া জেলা বিএনপির পাঁচজন নেতা বিভিন্ন আসনের প্রার্থী। তাই নিজ নিজ প্রার্থীর প্রচারণায় ব্যস্ত থাকায় সময় দিতে পারছেন না সিনিয়র নেতা মিনুর জন্য।

এ জন্য মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সঙ্গী করেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মিনু। ভোটারদের কাছে তার আমলে রাজশাহীতে করা বিভিন্ন উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন মিনু। তিনবারের মেয়র ও দুইবারের সংসদ সদস্য মিনুও প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়েছে যাচ্ছেন মহাগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায়। স্থানীয় নেতা সেখানে যোগ দিচ্ছেন।

তবে মিনুর সাবেক উন্নয়ন ম্লান হচ্ছে জঙ্গিবাদ ইস্যুতে। এতে কোথাও কোথাও বিব্রত হয়ে পড়ছেন। সর্বশেষ শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটে এমনই এক ঘটনা। একটি বেসরকারি টিভির জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহীকে ঘিরে তার নানামুখি পরিকল্পনার কথা জানান। একপর্যায়ে অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মিনুর তার কাছে জানতে চান, মেয়র থাকা অবস্থায় আপনার বিরুদ্ধে জঙ্গি মদদদানের অভিযোগ রয়েছে। আপনার দল থেকে এবার রাজশাহী-৪ আসন থেকে যিনি প্রার্থী হয়েছেন আবু হেনা, যিনি সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত এবং তিনি প্রকাশ্যে আপনার বিরুদ্ধে এ কথা বলেছিলেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?’

জবাবে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, এটা ঠিক না। আবু হেনা এবারও নির্বাচন করছেন, তাকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। এ সময় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় যখন জঙ্গি মদদদানে জড়িত হয়ে পড়ে তখন স্থানীয় কারও কারও তাতে সম্পৃক্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে আমরা মিজানুর রহমান মিনুর সম্মানহানি করতে চাই না। কিন্তু একটু পর জঙ্গিবাদ নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠলে বাদশা তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মিনুর সামনেই বলেন, আমি মিনুর সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ আনতে চাই না। এটা অনুচিত। যা কিছু বলতে চাই তা কোর্টে ডকুমেন্ট হিসেবে আছে। ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগে জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই আদালতে তার জবানবন্দিতে বলেছিলেন, মিনু মেয়র থাকা অবস্থায় বাংলা ভাইকে টাকা দিয়েছিলেন। এটা সিটি করপোরেশনের ট্যাক্সের টাকা। আমাদের জনগণের টাকা। তখন প্রতিবাদ না করে বিব্রত হন মিনু।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৮
এসএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।