ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

মসিক নির্বাচন: নতুন মহানগরে ভোটের উচ্ছ্বাস

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
মসিক নির্বাচন: নতুন মহানগরে ভোটের উচ্ছ্বাস ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন

বহুল প্রতীক্ষিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ ৩৩টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ১১টি নারী ওয়ার্ডে ভোটযুদ্ধ হবে আগামী ৫ মে। ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে।

মেয়র পদে না হলেও মহানগর মেতেছে কাউন্সিলর নির্বাচনে। ঘনিয়ে আসা ভোট উৎসব, ছড়াচ্ছে উত্তাপ।

এসব নিয়ে ৫ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেছেন আমাদের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান। আজ পড়ুন ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম কিস্তি।

নতুন মহানগরে প্রথম ভোট বলে কথা! নিজেদের ভোটে নির্ধারণ হবে প্রথম নগর পিতা। এমন ভাবনাতে স্বভাবতই অবারিত আনন্দের ফল্গুধারাই বয়ে যাওয়ার কথা নগরীর বাসিন্দাদের। কিন্তু ভোটের আগেই মেয়র পেয়েছে ময়মনসিংহ! 

কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেওয়ার পর এখন আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের আসনে বসার অপেক্ষায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু। অবশ্য চেয়ারটি তার জন্য নতুন নয় মোটেও। যদিও মর্যাদার দিক থেকে এটি অনন্য উচ্চতার।

টানা সাড়ে ৯ বছর পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার মাঝেই নবগঠিত সিটি করপোরেশনের প্রথম প্রশাসক হিসেবেও সেই আসনেই বসেছিলেন তিনি। ফলে নির্বাচনের ঢাকে কাঠির পর থেকেই নগরীর খেটে খাওয়া দিনমজুর থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সবার মাঝেই রব উঠেছিলো- মেয়র পদটিতে আবারো ৫ বছরের জন্য বসতে যাচ্ছেন টিটুই।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নের মধ্যে দিয়েই বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট করে দেয়। সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে থেকে নৌকার মাল্লা হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নতুন মহানগরের পুরনো সারথি ইকরামুল হক টিটুকেই বেছে নেন।

এরপর বিএনপির ভোটে না আসা, মেয়র পদে তিন প্রার্থীর জাল স্বাক্ষরে ফেঁসে যাওয়া এবং সংসদ নির্বাচনের উপহার হিসেবে নিজ দলের প্রার্থীকে সরিয়ে দিতে রওশন এরশাদের নেপথ্য ভূমিকাসহ ইত্যাকার কারণ ভোটের ২০ দিন আগেই মেয়র পদটির ফয়সালা হয়ে যায়।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়রের এমন সিদ্ধান্তে নগরবাসী কি হতাশ, আগামী ৫ মে’র ভোট কি তবে আর উৎসবে রূপ নিচ্ছে না, প্রার্থীদের জনসংযোগে ভোটারদের মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা কিংবা সাধারণ মানুষের মাঝেই নিত্য নতুন মেরুকরণের প্রবণতাও কি তবে থেমে যাবে— এমন সব প্রশ্ন সামনে রেখে ভোটারদের দূয়ারেই কড়া নাড়ে বাংলানিউজ।

‘নির্বাচনের ফল নির্ধারণে ভোটের আবেদন এখনো রয়েছে। ভোটের মাঠে মেয়র পদে যাদের পোস্টার বা ন্যূনতম প্রচারণা দেখেছি তাদের মধ্যে জনপ্রিয়, যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থী ছিলেন ইকরামুল হক টিটু।

“প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ‘আন্ডারডগ’ বানিয়ে বড় ব্যবধান গড়ে তিনি নির্বাচিত হতে পারতেন ২০ দিন পর। এখন সেটা ২০ দিন আগেই ঘটে গেছে” একদমেই যেন বলছিলেন নগরীর আঠারবাড়ি বিল্ডিং এলাকার প্রিন্টিং ব্যবসায়ী নূর আলম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতিতে (ইভিএম) কাউন্সিলর পদে এখন ভোট দিবো। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডেই শক্ত লড়াই হবে প্রার্থীদের মাঝে। ইতোমধ্যেই ভোটের আমেজও শুরু হয়ে গেছে। ’

মেয়র পদে সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার পর প্রথমদিকে অনেকেই ভেবেছিলেন, প্রচার প্রচারণা শুরু হলেও আর উত্তাপ ছড়াবে না আগামী ৫ মে’র ভোট। কিন্তু ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। কথার বাণ বা সমালোচনায় ঘায়েল করছেন একে অপরকে। ফলে পুরোদমে নতুন মহানগর কাঁপছে নির্বাচনী জ্বরে। ভোট উৎসবের উচ্ছ্বাস ভাটা পড়েনি একটুকুও।

এরই মধ্যে প্রথম নগর পিতা হিসেবে জনসমর্থিত প্রার্থীই নির্বাচিত হয়েছেন কিনা প্রশ্ন করতেই নগরীর আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাজাহারুল ইসলাম হৃদয় বাংলানিউজকে বলেন, মেয়র পদে ভোট দিতে পারলে অবশ্যই খুশি হতাম। আবার আশাহতও হইনি মোটেও। একটি মহানগরের গোড়াপত্তনে দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বই আমরা পেয়েছি। নবনির্বাচিত মেয়র তরুণ-যুবাদের মনের ভাষা বুঝেন। এ নগরীর প্রয়োজনে তিনি অতীতেও দিন-রাত খেটেছেন।

নগরীর চরপাড়া মোড় এলাকার প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনসুর আলম চন্দন বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে নিজের কর্মদক্ষতা ও গুণে সবার কাছেই জনপ্রিয় নগর পিতাই আমরা পেয়েছি।

ভোট হলেও তার পক্ষেই জনরায় আসতো। পার্থক্য হচ্ছে ক’দিন পরের সিদ্ধান্ত ক’দিন আগেই বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা চাই তিনি সবার সহযোগিতা নিয়েই নগরীর যানজট সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

স্থানীয় পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন বাংলানিউজকে বলেন, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে পাকা স্ল্যাব দিয়ে ফুটপাত তৈরি করে দিয়েছেন মেয়র। সেখানে টাইলসও বসানো হয়েছে। এই ফুটপাত হাঁটার জন্য ঠিক রাখা, নগরী নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা এবং নতুন নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে নগরীর সৌন্দর্যকে আরো ফুটিয়ে তুলতে নগরপিতা অতীতের মতোই কাজ করবেন বলে মনে করি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯ 
এমএএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।