বৃহস্পতিবার (০৯ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা আইনজীবী সমিতির জিল্লুর রহমান অডিটোরিয়ামে আইনজীবীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তিনি। ঢাকা আইনজীবী সমিতি এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
ঢাকাকে ঢেলে সাজাতে নিজের পঞ্চ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন ফজলে নূর তাপস। যার তিন নম্বরে তিনি রেখেছেন ‘সচল ঢাকা’ কর্মসূচি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা এখন অচল হয়ে গেছে। কর্মজীবী নারী-পুরুষ সবাইকে সকাল থেকে রাত অবধি চিন্তা করতে হয় কখন বাড়ি ফিরে যাব। এই শহরের নিরাপত্তাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ! সেই অচল ঢাকাকে আমরা সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সচল করতে চাই। তার অন্য পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও উন্নত ঢাকা।
তাপস তার পঞ্চ পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, প্রথমত ঢাকাকে ঘিরে রয়েছে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষা নদী। এটা এই শহরের ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য এখন মৃতপ্রায়। আমি নির্বাচিত হলে সেই মৃতপ্রায় ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করবো। দ্বিতীয়ত, বিগত ২০ বছরে ঢাকা শহরে কোনো সবুজায়নের কাজ হয়নি। আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলার মাঠ, পার্কসহ উন্মুক্ত স্থানের ব্যবস্থা করবো। যার মাধ্যমে আমরা ঢাকাকে সুন্দর করবো।
‘তৃতীয়ত, ঢাকায় মেট্রোরেল, ফ্লাইওভারসহ অনেক প্রকল্প হয়েছে। এরপরও ঢাকা শহর আজকে অচল। আমি নির্বাচিত হলে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে অচল ঢাকাকে সচল করবো। চতুর্থত, প্রধানমন্ত্রী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশটাকে সাজাতে কাজ করছেন। বাজেটকে তিনি পাঁচ লাখ কোটি টাকায় নিয়ে গেছেন। এসব অর্থ উইপোকায় খাচ্ছে। আমি নির্বাচিত হলে ঢাকা দক্ষিণকে সেই উইপোকামুক্ত করবো। এখানে কোনো দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না। ঢাকা হবে সুশাসিত। পঞ্চমত ও সর্বশেষ আমরা উন্নত ঢাকা গড়বো। আমরা ঢাকাকে ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নত ঢাকায় পরিণত করবো। ’
তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবো। আমরা পহেলা বৈশাখের মধ্যে সব সংস্থাকে তাদের কাজ শেষ করতে বলবো। এরপর সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন শুরু করবো। আমাদের উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার পর অন্তত তিন বছর কোনো সংস্থাকে এই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে দেবো না। অন্য সংস্থাগুলো মন্ত্রণালয়ের কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশন শুধু ঢাকাবাসীর কাছে দায়বদ্ধ। তাই ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না।
উপস্থিত আইনজীবীরা তাপসকে ডেঙ্গু বিষয়ে কথা বলতে বললে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরেও অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে। এর চেয়ে অনেক গরিব দেশও আছে। কিন্তু সেসব দেশের রাজধানীর রাস্তায় এমন ময়লা নেই। কোনো দেশের মানুষ মশার কামড়ে জীবন দেবে তা হতে পারে না। আমাদের জন্য কাজটা কঠিন, তারপরও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, নির্বাচিত হলে ৯০ দিনের মধ্যে মশকনিধন থেকে শুরু করে যাবতীয় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
এসময় ফজলে নূর তাপস দলমত নির্বিশেষে আইনজীবীদের পাশে থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে প্রথম একজন আইনজীবী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, দলমত নির্বিশেষে সমস্ত ঢাকাবাসীর মেয়র হিসেবে কাজ করব। আমি সংসদ সদস্য হিসেবেও তাই করেছি।
অনুষ্ঠানে তাপস ৩৫ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী যথাক্রমে রঞ্জন বিশ্বাস ও আব্দুর রহমান মিয়াজী এবং ৩৫, ৩৬ ও ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থী শেফালি মল্লিককে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গাজী শাহ আলমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জাজামন খান রচির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বার কাউন্সিলের সদস্য কাজী সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরুসহ সিনিয়র আইনজীবীরা।
এসময় ঢাকা বারের সাবেক সম্পাদক ও গণফোরাম নেতা আব্দুল বাতেন আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদে যোগ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২০
কেআই/এসএ