ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

দল নিবন্ধনে শর্ত, আইন কোনোটাই চায় না যুব শক্তি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২০
দল নিবন্ধনে শর্ত, আইন কোনোটাই চায় না যুব শক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হচ্ছে

ঢাকা: দল নিবন্ধনের শর্তগুলো গণনেতৃত্ব বিকাশে অন্তরায়। তাই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০(বি) ধারা বিলুপ্ত করার দাবি তুলেছে যুব শক্তি।

এ ধারাতেই দল নিবন্ধনের সব শর্ত দেওয়া আছে। একইসঙ্গে দল নিবন্ধন আইন-২০২০ প্রণয়ন না করার পক্ষেও মতামত দিয়েছে সংগঠনটি।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন (ইসি) দল নিবন্ধনে নতুন আইনের খসড়ার ওপর মতামত আহ্বান করলে সংগঠনটি রোববার (১৯ জুলাই) তাদের অবস্থান জানায়।

এক্ষেত্রে তারা নির্বাচন ভবনের সামনে সকালে অবস্থান নেওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেন।

যুব শক্তির আহ্বায়ক হানিফ বাংলাদেশি স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে দল নিবন্ধনে শর্ত ও আইনে বিপক্ষে নিজেদের অবস্থানের যুক্তি তুলে ধরা হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন-২০২০ সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মতামত চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। আমরা বাংলাদেশ যুব শক্তি মনে করছি, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ আইনের ৯০’র বি ধারাসহ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন ২০২০ গণনেতৃত্ব বিকাশের অন্যতম অন্তরায়। প্রস্তাবিত এ আইনের অধিকাংশ ধারা উপ-ধারাই বাংলাদেশের সংবিধান, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্য দেশগুলোতে কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করতে হলে কেন্দ্রীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় অফিস ও গঠনতন্ত্র হলেই রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫০০ থেকে ২০০০ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা মাত্র ৪২।

বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত হতে হলে ওই দলকে গঠনতন্ত্র, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ জেলা, উপজেলা, থানা মিলিয়ে সর্বমোট ১২৩টি সক্রিয় রাজনৈতিক অফিস থাকতে হয়। নতুন আইনে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করতে হবে অথবা ৫ শতাংশ ভোট লাগবে এবং সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্তি লাগবে।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের নাম শুনলে কোনো বাড়িওয়ালা অফিস ভাড়া দিতে চায় না। অফিস ভাড়া নেওয়া একটি দুঃসাধ্য ব্যাপার। ১২৩টি সক্রিয় রাজনৈতিক অফিস পরিচালনা করতে প্রতিমাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা, এক বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার মতো ব্যয় করতে হয়। অসৎ, চোরাকারবারি, মাদকব্যবসায়ী ছাড়া কোনো সৎ, যোগ্য, নিবেদিত ব্যক্তির পক্ষে এতো টাকা ব্যয় করে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করা দুঃসাধ্য ব্যাপার।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ আইনের অধীনে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রদত্ত অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক অর্ডিন্যান্সটি ২০০৯ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধনী) আইন ২০০৯ নামে সংসদে পাস হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ আইনের বিরোধিতা করে আসছে।

দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আইনসিদ্ধ হলেও জনসমর্থিত হয়নি। বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে। সব নিবন্ধিত দলও অংশগ্রহণ করেনি। তাছাড়া কোনো নিবন্ধিত দলের দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগও নির্বাচনগুলোতে ছিল না। যারা করেছে তারা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মার্কা নিয়ে করেছে। সৎ, নিবেদিত ব্যক্তিরা ওই দু'টি নির্বাচনে প্রার্থী হয়নি। নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের জন্য ওই আইন মেনে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল নতুন রাজনীতির পথ বন্ধ করতে পুরাতন পচা-গলা রাজনীতি জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে এ আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে। আমরা আইন সংশোধন নয়, বরং বাতিল চাই।

যুব শক্তির প্রত্যাশা, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম স্তম্ভ হওয়ায়, দেশে সুস্থ ধারার গণতন্ত্রের চর্চা বজায় রাখতে, গণনেতৃত্ব বিকাশে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ আইনের ৯০’র বি ধারাসহ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন ২০২০ বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করবে তারা।

যুব শক্তির আহ্বায়ক হানিফ বাংলাদেশির নেতৃত্বে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার সময় সংগঠনের উপদেষ্টা কণিক চন্দ্র রায়, যুগ্ম আহ্বায়ক এন ইউ আহমেদ, মো. রাসেল, নুরুল ইসলাম বিপ্লব, মো. রাশেদ, আসিফ সালমানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২০
ইইউডি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।