ঢাকা: করোনা মহামারির কারণে থমকে আছে প্রবাসে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার করে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড সরবরাহের কাজ। তবে পরিস্থিতি উন্নতি হওয়া সাপেক্ষে একেক দেশে একেক সময় কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
ইসি সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার পরিস্থিতি অন্য দেশের তুলনায় ভালো বিধায় সেখানেই সবার আগে স্থগিত কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।
ইসি সচিব মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে জুমে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম, ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান, সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হকসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।
ইসি সচিব মো. আলমগীরের স্বাক্ষর করা সভার কার্যপত্র থেকে জানা যায়, বিভিন্ন দেশ থেকে ইতোমধ্যে ভোটার হয়ে এনআইডি পাওয়ার লক্ষ্যে ৭৬৮ জন আবেদন করেছেন। তাই তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে পরীক্ষামূলকভাবে দ্রুত স্মার্টকার্ড সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, পাসপোর্ট অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগের সঙ্গে দ্রুত সভা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ নিয়ে এনআইডি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম জানান, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে পরিকল্পিত কর্মসূচি মোতাবেক প্রবাসীদের ভোটার করার জন্য বিদেশে টিম পাঠানো যায়নি। বর্তমানে কোনো কোনো দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পরিকল্পনা মোতাবেক শিগগিরই বিদেশে টিম পাঠানো সম্ভব হবে। তবে স্বল্পতম সময়ে মালয়েশিয়াতে টিম পাঠানো যাবে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য, দুবাই, মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসীদের জন্য অনলাইনে পোর্টাল তৈরি করে ভোটার হওয়ার আবেদন নিচ্ছে ইসি।
জানা যায়, সবচেয়ে বেশি সাড়া পড়েছে দুবাই প্রবাসীদের মধ্যে। যুক্তরাজ্য প্রবাসীদেরও আগ্রহ বেশ। আর মালয়েশিয়ায় তুলনামূলক কম সাড়া পড়েছে।
মালয়েশিয়া্য় এনআইডি সরবরাহের কাজে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম জানান, তিন কারণে দেশটিতে সাড়া কিছুটা কম। প্রথমত মালয়েশিয়া প্রবাসীদের বিরাট অংশ নিরক্ষর শ্রমিক। দ্বিতীয়ত, অবৈধ অভিবাসীও আছে। তৃতীয়ত রোহিঙ্গারাও সেখানে বাংলাদেশি পরিচয়ে অবস্থান করছে। যে কারণে এসব শ্রেণির কেউই অনলাইনে ভোটার হতে সাড়া দিচ্ছে না। আবার অনেক রোহিঙ্গা সাড়া দিয়েও ধরা পড়ছে। কাজেই এখানে একটু কম আবেদন পড়ছে। তবে এটা ধীরে ধীরে কেটে যাবে।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের অপারেশন প্ল্যানিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার ইনচার্জ স্কোয়ড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান সম্প্রতি বাংলানিউজকে জানান, দুবাই থেকে অন্তত ৪শ আবেদন এসেছে। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে অন্তত ৬০টি আবেদন। যুক্তরাজ্য থেকে উদ্বোধনের ঠিক পরপরই ৫০টির মতো আবেদন পড়েছে।
তবে আবেদনের সংখ্যা যেমনই হোক না কেন, মালয়েশিয়ায় শুরু করে কার্যক্রমটি ধারাবাহিক রাখতে চায় ইসি।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর দুবাই প্রবাসীদের মধ্যে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থারত বাংলাদেশি নাগরিকগদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এরই মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রমের দ্বার উন্মোচিত হয়। পরবর্তীকালে পর্যায়ক্রমে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অন্য দেশে কার্যক্রমটি শুরু হবে।
জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম জানান, যুক্তরাজ্যে, দুবাই, মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইনে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্যদি দিয়ে আবেদন করতে পারবেন। পরে প্রাপ্ত তথ্যদি যাচাই বাছাই করে প্রবাসেই বায়োমেট্রিক সংগ্রহ করে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।
আবেদনের সঙ্গে যে সব দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে:
বৈধ পাসপোর্টের কপি, বিদেশি পাসপোর্টধারী হলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের কপি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে শনাক্তকারী একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের পাসপোর্টের কপি, বাংলাদেশে বসবাসকারী রক্তের সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের নাম-মোবাইল নম্বর-এনআইডি নম্বরসহ অঙ্গীকারনামা, বাংলাদেশে কোথাও ভোটার হয়নি মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র।
বিভিন্ন দেশে প্রায় দেড় কোটির মতো প্রবাসী বাংলাদেশি অবস্থান করছে। বর্তমানে দেশে ভোটার রয়েছে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ১৯ হাজার ১১২ জন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২০
ইইউডি/এএ