ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আদিতমারী ইউএনও-উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২০
আদিতমারী ইউএনও-উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) ১৮জন অফিসারের লিখিত অভিযোগের তদন্ত করবেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওহাব ভূঞা।

বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে বিভাগীয় কমিশনারের দফতর থেকে উভয় পক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় মন্ত্রণালয় বিভাগের পক্ষে  আগামী ২৪ নভেম্বর তদন্ত করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে অসাদাচরন, অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ ও হত্যার হুমকি দেওয়ায় ইউএনওসহ ১৮জন অফিসার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে প্রকাশ, আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিধিবিধান ও নীতিমালা লংঘন করে কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে সেই দফতরের কর্মকর্তাকে অশ্রব্য ভাষায় গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকিও দেন চেয়ারম্যান।

উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, ভিজিডি, মাতৃত্ব ভাতা, কৃষি প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধাভোগীর তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন চেয়ারম্যান। বিধি বহির্ভূতভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেওয়ায় এবং প্রাক্কালন কাজ শেষ না হতেই বিল পরিশোধ না করায় সাম্প্রতিক সময় উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে রুমে বেঁধে পেটানোর হুমকি দেন চেয়ারম্যান।

শুধু তাই নয়, তার কথামত কাজ না করায় একজন নারী কর্মকর্তাকে বহিরাগতদের দিয়ে মানহানির ঘটনা ঘটানোর হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। সব দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা তুলে ধরা হয় অভিযোগে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, বৃহস্পতিবার মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধি সম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক দিয়ে খুলতে গেলে তার ছবি তোলেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একইসঙ্গে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করা হয় ‘(বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেবো। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?)’। এভাবে গালমন্দ করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।  

এ ঘটনায় ওই দিন রাতে ইউএনওসহ ১৮জন অফিসার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যার স্মারক নং - ০৫.৪৭.৫২০২.০০০.০২.০৮৩.২০- ৭৬৪। যার অনুলিপি বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়।

নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে রোববার(১৫ নভেম্বর) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় জিডি(নং৫৫৮) করেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একই দিন যৌথ স্বাক্ষরীত উপজেলার রাজস্ব তহবিলের ব্যাংক হিসাবের ১৯টি চেকের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস। যা নিয়েও আদিতমারী থানায় জিডি(নং ৫৫৯) করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্টানোটাইপিষ্ট হাবিবুর রহমান।

ইউএনওসহ অফিসারদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনায়ন করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি জানান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস। ঘটনার পর থেকে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।  

এ দিকে ৯ দফা অভিযোগ তুলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের প্রতি অনাস্থার প্রস্তাব তুলে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছেন উপজেলার ৮জন ইউপি চেয়ারম্যান।  

এসব ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করে সোমবার (১৬ নভেম্বর) তদন্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগের (স্মারক নং -৪৬.০০.০০০০.০৪৬.২৭.০৩৬.২০২০-৯২০) নির্দেশে ঘটনাটি সরেজমিন তদন্ত করবেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওহাব ভূঞা। তদন্তের স্বার্থে আগামী ২৪ নভেম্বর সকাল ১১টায় তদন্ত সংশ্লিষ্টদের উপজেলা পরিষদের উপস্থিত থাকতে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।  

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ২৪ নভেম্বর বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় সরেজমিনে আদিতমারী উপজেলা পরিষদের বিবাদমান ঘটনা সরেজমিনে তদন্ত করবেন বলে চিঠি পেয়েছি। সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের চিঠি পাঠানো হয়েছে।

** সেই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যানদের অনাস্থা

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।