ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

করোনার মধ্যে ইউপি নির্বাচন দেওয়ায় উদ্বিগ্ন সচেতন মহল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৯ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২১
করোনার মধ্যে ইউপি নির্বাচন দেওয়ায় উদ্বিগ্ন সচেতন মহল

বাগেরহাট: বাগেরহাটে বেড়েই চলেছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই আসছে মৃত্যুর খবর।

সংক্রমণের হার ছাড়িয়েছে ৪৫ শতাংশের উপরে। জেলার মোংলা এই হার রয়েছে ৭০ শতাংশের উপরে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক স্থগিত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাগেরহাটের সচেতন মহল। সাধারণ মানুষও আতঙ্কিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে।

২ জুন নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি যাওয়া শুরু করেছেন। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্বয়ং সিভিল সার্জনও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বাগেরেহাট জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট জেলার নয়টি উপজেলার ৭৫টি ইউনিয়নের মধ্যে আগামী ২১ জুন ৭০টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হবে। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ করোনা শনাক্ত হওয়া উপজেলা মোংলাও রয়েছে। মোংলার ছয়টি ইউনিয়নে ৭৮টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে, রোববারের (০৬ জুন) রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় বাগেরহাট জেলায় নতুন করে আরও ৫৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন একজন। এ নিয়ে বাগেরহাট জেলায় ১ হাজার ৭৫২ জনের করোনা শনাক্ত হল। মারা গেছে ৪৫ জন। বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন দেড় শতাধিক রোগী। এ পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংক্রমণের হার বাড়ার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, করোনা সংক্রমণের কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ। সীমিত করা হয়েছে ধর্মীয় ও পারিবারিক আচার অনুষ্ঠান। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন দিয়ে সাধারণ মানুষকে করোনা সংক্রমণের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাগেরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফররুখ আহমেদ জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনের জন্য সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে। তবে সেটা মানুষকে বিপদে ফেলে নয়। যে পরিস্থিতিতে সারাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল, বর্তমানে বাগেরহাটে তার থেকে অনেক বেশি খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। করোনা সংক্রমণের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন করাটা অবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত হবে। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কাছে বাগেরহাট জেলার নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানাই।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), বাগেরহাটের সভাপতি অধ্যাপক চৌধুরী আব্দুর রব বাংলানিউজকে বলেন, করোনা সংক্রমণের হার যেভাবে বেড়েছে, তাতে জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা উচিত। বাগেরহাটে সংক্রমণ ও মৃত্যু হারের সঙ্গে নির্বাচনটা খুবই বেমানান। নির্বাচন এলে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ভোটের স্বার্থে মানুষের বাড়ি বাড়ি যাবে। তারা নির্বাচনী কার্যক্রম চালাবে এটাই স্বাভাবিক। সে পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। বাগেরহাটের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে এই এলাকার নির্বাচনের বিষয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, গত ১০ দিন ধরে বাগেরহাটে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে মোংলা ও মোরেলগঞ্জে। সদরেও সংক্রমণের হার বেড়েছে। মোংলায় ৭০ শতাংশ এবং জেলায় সংক্রমণের হার ৪৫ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঘোষণা অনুয়ায়ী ২১ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটা যেহেতু স্থানীয় সরকারের নির্বাচন। সেখানে নির্বাচনী কাজে জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য মুভমেন্ট হবে। এর ফলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যাবে।

বাগেরেহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই শঙ্কার বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের সিদ্ধান্ত পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৮ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।