ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

যে কোনো মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় নোয়াখালী পৌরবাসী 

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২২
যে কোনো মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় নোয়াখালী পৌরবাসী 

নোয়াখালী থেকে: প্রায় দেড় শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাচকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে যেমনভাবে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা, তেমনভাবে রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। দেশের প্রথম শ্রেণির কয়েকটি পৌরসভার মধ্যে অন্যতম এ পৌর সভাটির নির্বাচনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো হয়েছে নির্বাচনী এলাকাকে।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় নির্বাচন শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে কোনো মূল্যে তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।  

ভোট কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারসহ পৌরসভায় বসবাসরত সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। দিন শেষে নগর পিতা যেই হোক সে যেন জনগণের ভোটেই হয় সে ব্যাপারে প্রশাসনের ন্যায্য ভূমিকা প্রত্যাশা করছেন ভোটাররা।  

নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীত উপেক্ষা করে সকাল ৮টা থেকে ভোটাররা কেন্দ্রে আসা শুরু করেছেন। রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নোয়াখালী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৩৪টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, ভোট কেন্দ্রে তাদের এজেন্টদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।  
 
পৌরসভার পুলিশ লাইন্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ওয়ার্ডের ভোটার কবির আহম্মদ বলেন, পৌর এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করবে এমন প্রার্থীকে আমরা ভোট দেব। যে প্রার্থী পৌরবাসীর নাগরিক সুবিধা নিয়ে কাজ করবে আমরা সাধারণ ভোটাররা তাদের পক্ষে থাকবো।

মাইজদী বালিকা বিদ্যা নিকেতনে এক ভোটার বলেন, এবারের নির্বাচনে মোট ৭ জন প্রার্থী মেয়র নির্বাচন করছেন। আমাদের মতো সাধারণ ভোটারদের কাজ তাদের মধ্য থেকে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিয়ে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে জয়ী করা।

ভোট কেন্দ্রে আসা আরো কয়েকজন বলেন, ভোটাররা যেন নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা প্রশাসনকে করতে হবে। আমরা পৌরবাসী একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৩৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, কাউন্সিলর পদে ৬৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  

ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য ৭৫০ জন পুলিশ, ৪৫০ জন আনসার, ৩ প্লাটুন বিজিবি, ৩ প্লাটুন র‌্যাব, পুলিশের ৪টি মোবাইল টিম, ১ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন।

এ পৌরসভায় মোট ভোটার ৭৫ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে পূরুষ ৩৭ হাজার ৪০১ জন, নারী ৩৮ হাজার ৩২৫ জন।  

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌরসভার বর্তমান মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল।  

এছাড় জাতীয় পার্টি থেকে লাঙল প্রতীকে প্রচারণা করছেন সামছুল ইসলাম মজনু, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শহীদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র নারিকেল গাছ প্রতীকে আবু নাছের, জগ প্রতীকে কাজী আনোয়ার হোসেন, কম্পিউটার প্রতীকে সহিদুল ইসলাম ও মোবাইল ফোন প্রতীকে লুৎফুল হায়দার প্রচারণা চালিয়েছেন।  

আধুনিক পৌরসভা গড়ে তুলে নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রার্থীরা।

নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, নির্বাচনে কোনো প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। ভোটগ্রহণ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে কঠোর নিদের্শনা দেওয়া আছে। নির্বাচনের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। কেউ যদি কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে গোলযোগ সৃষ্টি বা ভোটে প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, তিন স্তরের নিরাপত্তা রয়েছে কেন্দ্রগুলোতে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে তৎপর রয়েছে।  

তিনি বলেন, পৌরসভার প্রতিটি কেন্দ্রকে সমান গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তার পরিকল্পনা হয়েছে। অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় এ নির্বাচনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুনত্ব আছে। কেউ জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেউ কারো ভোট দিতে পারবেন না। আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ছবি মেলানো হবে।

শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ, আনসারসহ ১৩ জন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রের ফটকে একটি করে স্ট্রাইকিং টিম দায়িত্ব পালন করবে। তারা ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করবেন। প্রতিটি কেন্দ্রকে সুরক্ষিত রাখতে একটি মোবাইল টিম কেন্দ্রের চারপাশে টহল দেবে।

নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার জেলা নির্বাচন অফিসার রবিউল আলম বলেন, কোনো দুর্বৃত্তায়ন তারা হতে দেবে না। ভোট হবে সুষ্ঠু। দুর্বৃত্তদের সব অশুভ পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে।  

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সহিদ উল্লাহ খান সোহেল মাইজদী পাবলিক কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন। এ সময় তিনি বলেন, ভোট সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২২
এসএইচডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।