ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

পাবনায় ভোটের মাঠে বহিরাগতদের আনাগোনা, শঙ্কায় ভোটাররা! 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২২
পাবনায় ভোটের মাঠে বহিরাগতদের আনাগোনা, শঙ্কায় ভোটাররা! 

পাবনা: পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৭ জুলাই। জেলার শেষ এই ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ নিয়ে ভোটারদের মাঝে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রচার-প্রচারণাকে কেন্দ্র করে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

জানা গেছে, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের দেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি। এতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ ভোটাররা। তবে প্রচার প্রচারণায় বেশ জমজামাট হয়ে উঠেছে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড।

এদিকে সরেজমিনে ভোটের মাঠে গিয়ে সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। প্রথমবারের মতো এই ইউনিয়নের ভোটাররা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেবেন। ফলে এই ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়েও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা ও অনাগ্রহ। তারা মনে করছেন, পছন্দের প্রার্থীকে তারা ভোট দেবেন কিভাবে। সাধারণ ভোটাররা জানেন না কিভাবে তারা ভোট দেবেন।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে তারা সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। নানা ভঙ্গিতে নিজ প্রতীকে ভোট নিতে ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত প্রার্থীরা। দিচ্ছেন নানান ধরনের প্রতিশ্রুতি। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে চাপা আতঙ্কের মধ্যেও প্রচার-প্রচারণা ততই জমে উঠছে। চায়ের দোকানে আড্ডার ফাঁকে চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলাপ-আলোচনা।  

পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো ইউনিয়ন। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা।

সাঁথিয়া পৌরসভা সংলগ্ন এই ইউনিয়নে প্রচারণায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে বিপুল সংখ্যক বহিরাগত মাঠে কাজ করছেন। পৌর এলাকা ও আশপাশ থেকে সরকার দলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইউনিয়নের মাঠঘাট দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে অনেকটাই অসহায়ত্ব দেখা গেছে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মুখে।

সাধারণ ভোটার ও স্বতন্ত্র প্রাথীদের অভিযোগ, নৌকার পক্ষে কিছু লোকজন ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তারা সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছেন। ভোট দিয়ে লাভ নেই, যাকেই দেবেন ভোট যাবে নৌকায়’। এছাড়াও ভোট না দিলে পরবর্তীতে এলাকায় থাকতে পারবেন না বলেও হুমকি দিচ্ছেন তারা। বিশেষ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী রইজ উদ্দিনের সমর্থকদের নানা হুমকি দিচ্ছেন তারা। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীদেরও নানা ধরনের বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে।

এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। এর মধ্যে একজন নৌকার আর বাকি ৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে সাধারণ ও সংরক্ষিত ১২টি ওয়ার্ডে মোট ৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  

ইউনিয়নটিতে মোট ভোটার রয়েছে ২৯ হাজার ৬২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ৩৭৭ ও নারী ভোটার রয়েছে ১৪ হাজার ২৪৯ জন। ৯টি কেন্দ্রে ৯৯টি ভোট কক্ষে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী রইচ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী পৌর ও শহর এলাকা থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী এনে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। সাধারণ ভোটারসহ আমার নেতাকর্মী-ও সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রর্দশন করছে। তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছেন কেন্দ্র দখল করে নেবে। মানুষকে ভোট দিতে দেবে না। শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান নিশ্চিত করতে না পারলে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মহড়া, হুমকি-ধমকি বন্ধ করতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থেকে যাবে। বিগত নির্বাচনে আমার বিজয়ী ফলাফল ক্ষমতা দেখিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি বহিরাগতসহ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সাধারণ ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে।  

তিনি আরও বলেন, নতুন পদ্ধতিতে ভোট হবে, এলাকার সাধারণ মানুষ বুঝেই উঠতে পারছে না কিভাবে তারা ভোট দেবে। তাই নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা অতিদ্রুত ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডভিত্তিক তাদের প্রচার মাধ্যম ও ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে প্রচার করলে ভোটারদের ভয় বা শঙ্কা কিছুটা কম হবে।

ভোটের পরিবেশ নিয়ে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হোসেন আলী বাগছীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জানতে চান কেন তারা নির্বাচনী এলাকাতে এসেছেন। কি কাজ তাদের এখানে। ভোটগ্রহণের আগে নির্বাচনী এলাকায় গণমাধ্যমের উপস্থিতি নিয়েও তিনি ক্ষিপ্ততা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সবেমাত্র নির্বাচন শুরু হয়েছে। আপনারা ভোটের দিন আসবেন এখন আপনাদের কোনো কাজ নেই।

নির্বাচন নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ এখনো শান্তিপূর্ণ রয়েছে। সহিংসতা বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা হলে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। আপনারা দেখবেন সম্প্রতি পাবনায় যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে কোনো প্রার্থীদের ছাড় দেওয়া হয়নি এখানেও হবে না। পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। অভিযোগ পেলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইভিএমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, বিগত দিনগুলিতে ভোটের আগে একদিন মগ ভোটিং এর আয়োজন করা হতো এবার দুইদিন করা হয়েছে। ভোটার ও ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যা যা প্রয়োজন সব করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।