ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বিএনপি আমলের পুলিশ-প্রশাসনকে ভোটে চায় না আ.লীগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২২
বিএনপি আমলের পুলিশ-প্রশাসনকে ভোটে চায় না আ.লীগ

ঢাকা: বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিয়োগ পাওয়াদের সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বের বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সকল সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে ইসির অধীনে ন্যস্ত করাসহ ১৪ দফা দাবি তুলেছে দলটি।

রোববার (৩১ জুলাই) নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে সংলাপে বসে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের প্রস্তাবগুলো হলো—
১) নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বে রেখে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা প্রদর্শন।

২) নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাহী বিভাগের সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার দায়িত্বশীলতা।

৩) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং এর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ। এটি সর্বজন স্বীকৃত, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য সব সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে একদিকে যেমন সাংবিধানিক পদে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, অন্যদিকে বিএনপি-জামাত অশুভ জোট সরকারের সময় কর্মকর্তা পর্যায়ে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে এক বিপুল সংখ্যক দলীয় ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই সকল দলীয় ব্যক্তি এখন নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে এই বিষয়ে কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া, বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময় দলীয়করণের অংশ হিসেবে পুলিশসহ সিভিল প্রশাসনে ব্যাপকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়োগ করেছিল। এদের অনেকেই এখন জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অথবা দায়িত্ব পাওয়ার জন্য অপেক্ষমান। এই সকল দলীয় কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুতপূর্বক তাদের সকল ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখতে হবে।

৪) ছবিযুক্ত একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা এবং ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচন কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা।

৫) ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ বৃদ্ধি করা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের মতো প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধ করতে ইভিএমের কোন বিকল্প নেই। ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের শুরুর দিকে কিছু কিছু ভোটারের অপছন্দ থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় প্রমাণিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি এ সকল বন্ধ করে একটি টেকসই স্বচ্ছ নির্বাচন পদ্ধতি বাস্তবায়ন ইভিএম ব্যবস্থায় সম্ভব।

বর্তমান সরকারের অব্যাহত সহায়তা ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এখন ১ লক্ষ ৫০ হাজারের অধিক ইভিএম মেশিন রয়েছে, যা দিয়ে মোট ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার কেন্দ্রে শতকরা মাত্র ৩১ শতাংশ কেন্দ্রে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট নেওয়া সম্ভব। আগামী নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।

৬) বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পরিবর্তে প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা।

৭) আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ।

৮) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী কোনোভাবেই কোনো দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত বা কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।

৯) নির্বাচনে পেশিশক্তি ও অর্থের প্রয়োগ বন্ধ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সকল পর্যায়ের ভোটারের অবাধ ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করা।

১০) নির্বাচনের পূর্বে ও পরে সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

১১) নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সকল সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা।

১২) নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবলমাত্র আবশ্যকীয় দৈনন্দিন (রুটিন) কার্যাবলীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা।

১৩) এডহক বা অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থার পরিবর্তে টেকসই সাংবিধানিক, আইনি ও রেগুলেটরি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা।

১৪) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি ‘past and closed chapter’। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক এবং অবৈধ ঘোষণা করেছে। আইন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১১-এর বিধান অনুযায়ী এই বিষয়ে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এই বিষয়ে সাংঘর্ষিক কোন মন্তব্য করা সংবিধান লঙ্ঘন করার শামিল।

এই প্রস্তাবগুলো ছাড়াও ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক রেগুলেটরি কমিশন ‘নির্বাচন কমিশন’-কে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবে।

সংলাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কর্নেল ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ প্রমুখ। সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংলাপে অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।