চাঁপাইনবাবগঞ্জ: দুই দফা বন্ধ হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এবার তৃতীয় দফায় ২ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
ফের ভোট বন্ধের শঙ্কা নিয়েই প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। বর্তমান চেয়ারম্যান ও তার পরিষদ নির্বাচন বন্ধের চেষ্টা চালালেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও প্রশাসন চায়, দ্রুত নির্বাচনটি সম্পন্ন হোক।
প্রায় বছর খানেক আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সব ইউনিয়নে নির্বাচন ধাপে ধাপে শেষ হলেও সীমানা জটিলতার কারণে শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুই দফা আটকে যায়। তবে আদালতে এর নিষ্পত্তি না হলেও তৃতীয় দফা নির্বাচনের তারিখ ২ নভেম্বর ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা। পোস্টারে পোস্টারে নির্বাচনী এলাকা ছেয়ে যাবার কথা থাকলেও এ বছর হয়েছে তার ব্যতিক্রম। অনেক প্রার্থী প্রথম দফা ও দ্বিতীয় দফায় পোস্টার ও প্রচারণা বাবদ মোটা অংকের টাকা খরচ করে ফেলায় নতুন করে আর খরচ বাড়াতে আগ্রহী নন। নির্বাচনের মাত্র দুইদিন বাকি। কিন্তু শেষ মুহূর্তেও জমে ওঠেনি নির্বাচনের প্রচারণা। এদিকে জয়ের ব্যাপারে সব প্রার্থীই আশাবাদী হলেও অনেকটা শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা নিয়েই প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীসহ তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৪৮ সাধারণ ইউ পি সদস্য প্রার্থী ও ১৮ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী।
দুর্লভপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যেই শঙ্কা কাজ করছে। তারা প্রতিদিনই নজর রাখছেন উচ্চ আদালতের দিকে। যে কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়েছিল, সেটি এখনও আদালতে বিচারাধীন থাকায় সবার মধ্যেই এ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু আহম্মেদ নজমুল কবির মুক্তার ভোট ব্যাংকে বাগড়া দিচ্ছেন একই দলের সমর্থক ও সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলার রশিদ সনু। এছাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রাজিব রাজু সীমানা সংক্রান্ত মামলার বাদী হওয়ায় তার সমর্থিত ভোটারদের একটি বড় অংশ চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু আহম্মেদ নজমুল কবির মুক্তাকে সমর্থন না দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে এ নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী গোলাম আজম অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু আহম্মেদ নজমুল কবির মুক্তা সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার দাবি, তিনি দুই বারের সফল চেয়ারম্যান। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে ইউনিয়নবাসী তাকেই বেছে নেবে।
অপরদিকে দুই বারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলার রশিদ সনু এবার মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে আছেন। তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
আনারস প্রতীকের প্রার্থী গোলাম আজমের দাবি, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জনগণ তাকেই নির্বাচিত করবে।
এদিকে প্রার্থীদের মত শঙ্কিত ভোটাররাও। তবে ভোটাররা চান সুষ্ঠু প্রভাবমুক্ত একটি নির্বাচন। আর যোগ্য ব্যক্তিকেরই চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নিতে চান তারা।
কালুপুর গ্রামের ভোটার আব্দুল বাতেন জানান, নির্বাচন নিয়ে এবার আগ্রহ কম। কারণ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। তাই ২ নভেম্বর ভোট হলে তিনি ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন।
সদস্য প্রার্থী শরিফ উদ্দিন জানান, তিনি নির্বাচন বন্ধের শঙ্কায় গণসংযোগে মনোযোগ দিতে পারেননি। তবে ২৯ অক্টোবর থেকে তিনি পুরোদমে প্রচারণা শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে রিটকারী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রাজিব রাজু বলেন, যে কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে, সেটি আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়ার আগে কীভাবে তফসিল ঘোষিত হয়, তা বোধগম্য নয়। সোম বা মঙ্গলবার উচ্চ আদালতে শুনানি হলে আদালত আমার পক্ষেই রায় দেবেন।
ইভিএমের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার তাহসিনুর রহমান।
অপরদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্টেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত জানান, নির্বাচনের দিন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা প্রতিটি কেন্দ্রে নিশ্চিত করা হবে। আনসার ও পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবির টহল থাকবে। প্রতি কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স।
এবার দুর্লভপুর ইউনিয়নের ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৯৮৪। ১৭টি কেন্দ্রে ভোট হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২২
এসআই