ঢাকা, শুক্রবার, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

বিনোদন

এক দশক পেরিয়ে কুসুম সিকদার

বিনোদন প্রতিবেদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১২
এক দশক পেরিয়ে কুসুম সিকদার

শুটিং চলছিল ফ্রান্সের প্যারিসে। ইমোশনাল সিকোয়েন্স ।

নায়িকার করুণ অভিব্যক্তি। চোখের কোন থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরবে জল। কিন্তু কই! চোখ ছলছল হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কই চোখের পানি বের হচ্ছে না। একবার, দুবার, তিনবার ক্যামেরা অন করা হল। এক ফোঁটা পানিও তো চোখ থেকে বের হয় না। হঠাৎ পরিচালক হো হো করে হেসে উঠলেন। ঘটনা কী! প্যারিসে তখন তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি। চোখের কোনায় পানি জমে যাচ্ছে। হাসির রোল উঠল ইউনিটে। ছবির নাম ‘লাল টিপ’। নায়িকা কুসম সিকদার।

স্বপন আহমেদ পরিচালিত ‘লাল টিপ’ ছবিটির শুটিংয়ে ঘটেছে এমনই অনেক রোমাঞ্চকর ঘটনা। ছবিটিকে ভালো করে তুলতে কুশীলব আর কলাকুশলীদের ছিল আন্তরিক প্রচেষ্টা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের ২৬টি প্রেক্ষাগৃহে একযোগে মুক্তি পাওয়া ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই ছবিটির ব্যবসায়িক ফলাফল একেবারে মন্দ নয়। আগামী ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন ‘লাল টিপ’ মুক্তি দেওয়া হবে ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে।

বাংলানিউজকে সম্প্রতি কুসুম সিকদার জানিয়েছেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক সিনেমা হলে তিনি ‘লাল টিপ’ ছবিটি দর্শকদের সঙ্গে দেখেছেন কারণ দর্শকদের সরাসরি রেসপন্স পাওয়ার আনন্দই অন্য রকম।   দর্শকদের প্রতিক্রিয়ায় কুসুম মুগ্ধ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজটা আমরা সবাই খুব মনোযোগের সঙ্গে করেছি। তাই প্রত্যাশা ছিল দর্শক ছবিটি ভালোভাবেই নেবেন। মুক্তি পাওয়ার পর দর্শকদের সাড়া আমাকে অভিভূত করেছে। আমার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে ‘লাল টিপ’।

‘লাল টিপ’-এর পর্দায় নিজের উপস্থিতি সম্পর্কে কুসুম বললেন, আমি সবসময় মেকআপ ছাড়াই অভিনয় করার চেষ্টা করি। আমার মনে হয় মেকআপ না নিলেই স্ক্রিনে আমাকে বেশি ভালো লাগে। এ ছবিতেও শুধু চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছি। প্যারিসে শুটিংয়ের সময় আমাদের পরনের পোশাকগুলোর ডিজাইন করেছিলেন ফরাসি ডিজাইনার হিলারি এন্ডুজার। আর বাংলাদেশে শুটিং ও গানের দৃশ্যের শুটিংয়ের পোশাকগুলোর ডিজাইন করেছি আমি নিজেই।

নায়ক ইমনের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে কুসুম সিকদার বললেন, ইমনের সঙ্গে চলচ্চিত্রে এটি আমার দ্বিতীয় কাজ। এর আগে ওর সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয় করেছি। কাজেই আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল আগে থেকেই। যখন শুনেছিলাম, এই ছবিতে ইমন কাজ করছে, তখন বেশ স্বস্তি পেয়েছিলাম। কারণ অস্বস্তি নিয়ে ভালো কাজ করা যায় না। ইমনের সেরা গুণ হল তার ধৈর্য্য। সহশিল্পীর সুবিধা-অসুবিধার প্রতিও তার বেশ নজর।

খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচালিত ‘গহীনে শব্দ’ ছবিটি ছিল কুসুম সিকদার অভিনীত প্রথম ছবি। সম্প্রতি এ ছবিটি ২০১০ সালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। খালিদ মাহমুদ মিঠুও নির্বাচিত হয়েছেন শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে।

ছবিটির এই সাফল্যে দারুণ আনন্দিত কুসুম সিকদার। কুসুম সিকদার মনে করেন, ছবিটির এই সাফল্যে তিনিও ভাগিদার। তার অভিনয়জীবনে ‘গহীনে শব্দ’ দান করেছে ভিন্নমাত্রা । যাঁরা এই চলচ্চিত্র দেখেছেন, সবাই কুসুম সিকদারের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন।

আগামীতে চলচ্চিত্রে নিয়মিত দেখা যাবে কিনা জানতে চাইলে কুসুম বললেন, বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে আর কাজ করব কি না, এই প্রশ্ন অনেকেরই। উত্তরে আমি বলি, কাজের পরিবেশ স্বস্তিদায়ক হলে অবশ্যই চলচ্চিত্রে কাজ করব। তবে সবার আগে ছবির গল্পটা আর চরিত্রটি আমার পছন্দ হতে হবে।

কুসুমকে সবাই অভিনেত্রী হিসেবে চিনলেও মিডিয়ায় এসেছিলেন গায়িকা হিসেবে। কয়েকটি স্টেজপ্রোগ্রামে গান গাওয়ার পর পত্রিকায় তার ইন্টারভিউ বের হয়। পত্রিকায় ছাপা হওয়া কুসুমের ছবি দেখে বন্ধুরা তো মুগ্ধ। তাদের উৎসাহেই ২০০২ সালের লাক্স-আনন্দধারা মিস ফটোজেনিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সবাইকে ডিঙিয়ে এতে প্রথম হওয়ায় চমকে যান নিজেই। সেখান থেকেই শুরু হয় তার নতুনভাবে পথচলা। অবশ্য অভিনয়ে নিয়মিত হন ২০০৬ সাল থেকে। এ প্রসঙ্গে কুসুম সিকদার বলেন, মিস ফটোজেনিক খেতাব জয়ের সময় আমি ছিলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ’র ছাত্রী। সে সময় পড়ালেখার প্রতিই আমার বেশি মনোযোগ দিতে হয়েছে। কারণ পরিবার থেকে বলেছিল, সবার আগে লেখাপড়া। তারপর অন্য কিছু। আমি নিজেও লেখাপড়াকে প্রাধান্য দিতে চেয়েছি। তখন অনেক ভালো কাজের প্রস্তাব পেয়েছি। চলচ্চিত্রে অভিনয়েরও প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু করতে পারিনি। বিবিএ শেষ করে নিয়মিতভাবে কাজ শুরু করি।

বর্তমানে কুসুম সিকদার তৃতীয় ছবিতে অভিনয়ের জন্য অপেক্ষায় আছেন। তবে বসে নেই তিনি মোটেও। ব্যস্ত সময় পার করছেন টিভিনাটকে অভিনয় নিয়ে। যার মধ্যে রয়েছে ধারাবাহিক নাটক ‘দেয়াল’ ও ‘বোয়িং ৭০৭’।

মিডিয়ায় পথচলার এক দশক পূর্ণ করে এগিয়ে চলেছেন কুসুম সিকদার। এ লম্বা সময় কাজ করে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সবসময় পারিবারিক সহযোগিতাকে বড় বলে মনে করেন। এ প্রসঙ্গে কুসুম বললেন, এই দীর্ঘ পথচলা সম্ভব হয়েছে আমার স্বামী ও শাশুড়ির জন্য। নানাভাবে তারা আমাকে সমর্থন ও অনুপ্রাণিত করেছেন। বিয়ের আগে যা পেয়েছিলাম মা-বাবার কাছ থেকে।

একনজরে কুসুম kusum_

পুরো নাম : কুসুম সিকদার
উচ্চতা : ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি
ওজন : ৪৮ কেজি
জন্ম তারিখ : ১২ এপ্রিল
রাশি : মেষ
প্রথম মডেলিং : সিমেন্স
টার্নিং পয়েন্ট : লাক্স-আনন্দধারা মিস ফটোজেনিক প্রতিযোগিতা ২০০২
প্রথম চলচ্চিত্র : গহীনে শব্দ
পছন্দের কাজ : লাল টিপ
প্রিয় ব্যক্তিত্ব : মা
প্রিয় রঙ : সাদা-কালো
প্রিয় খাবার : নুডুলস ও পিৎজা
প্রিয় অভিনেতা : অনেক
প্রিয় অভিনেত্রী : কেট উইন্সলেট

বাংলাদেশ সময় : ১৬২৫, মার্চ ১৩, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।