মৌলভীবাজার: পাখির প্রতি ভালোবাসা না জাগা মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। মোটামুটি সবাই পাখি ভালোবাসেন।
পাখি প্রকৃতির মহা উপকারী বন্ধু। নীরবে-নিভৃতে নানাভাবে পাখিরা প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষায় কাজ করে চলেছে। পাখিরা যেখানটাতে থাকে বা বসবাস করে এর অর্থ হলো সেই জায়গার প্রকৃতি ভালো আছে, সুস্থ আছে। পাখিরা কখনো খারাপ প্রকৃতি বা অসুস্থ পরিবেশে টিকে থাকতে পারে না।
সম্প্রতি দারুণ এক খবর হলো, বাংলাদেশের পাখি-তালিকায় যুক্ত হয়েছে সামদ্রিক পাখি ‘ছোট নডি’। এ নিয়ে বাংলাদেশে রেকর্ড করা মোট পাখির তালিকা বর্তমানে ৭২৮টি।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী গবেষক সীমান্ত দীপু বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মাসের সাত তারিখে আমাদের বন্ধু এবং আন্তর্জাতিক পাখি গবেষক গ্যারি সোনাদিয়া দ্বীপে যাওয়ার সময় এই নতুন পাখিটির দেখা পান। মাছ ধরার একটি ট্রলারের পেছনে তারা অনেকগুলো গাঙচিল আর পানচিলের সঙ্গে নতুন পাখিটি ছিল। পাখিটির নাম ‘লেসার নডি’। বাংলায় এর নাম হতে পারে ‘ছোট নডি’। পাখিটিকে এ দেশে আগে আর কখনো দেখা যায়নি। এর ফলে এ দেশের পাখির তালিকায় আরও একটি নাম যোগ হলো। পাখি–গবেষক ও পাখিপ্রেমীদের কাছে সত্যিই এটি একটি বড় খবর। এ নিয়ে বাংলাদেশে রেকর্ড করা মোট পাখির তালিকা দাঁড়ালো ৭২৮ নম্বরে।
‘ছোট নডি’ সম্পর্কে তিনি বলেন, এই পাখিটার প্রজনন মৌসুম আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। এটা তো অক্টোবর মাস না এখনো এটা সেপ্টেম্বর। এটা খুবই অস্বাভাবিক অবস্থায় দেখা গেছে। জেনারেলি যেটা হয় আমরা সম্প্রতি যেসব পাখি পেয়েছি সেটা ঝড়ের আগে এবং পড়ে। ধরেন অন্য অঞ্চলে ঝড় হচ্ছে অর্থাৎ ভারত মহাসাগরে ঝড় হচ্ছে তখন আমাদের বঙ্গোপসাগরে এই ধরনের ফেলাসিক বার্ডগুলো (সামুদ্রিক পাখি) দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের কোনো পরিস্থিতির কারণে কোনো অঞ্চলে অন্য দেশের মহাসাগরগুলোতে যদি প্রবল ঝড় বা দুর্যোগপূর্ণ কোনো কিছু সৃষ্টি হয় সেটা বাতাসে ভর করে অন্য অঞ্চলতে চলে আসে।
আমাদের ধারণা, এই কারণে হয় হয়তো ভারত মহাসাগর থেকে এই নতুন পাখিটি বঙ্গোপসাগরের সীমানায় চলে আসতে পারে। অথবা অন্য কোনো অস্বাভাবিক কারণ থাকতে পারে। পাখিগুলো এত দূরের পথ আসার পর ওরা ভীষণ টায়ার্ড (ক্লান্ত) হয়ে যায়। এগুলো সি-বার্ড (সামুগ্রিক পাখি)। এরা যদি কিছু দিন খাবার এবং তাদের যদি ডিসটার্ব না করা হয় তবে আস্তে আস্তে ওরা ওদের আবাসস্থলে ফিরে যায়।
এই লরিডি পরিবারের যত পাখি আছে বেশ কয়েকটি গোত্র আছে। গাঙচিল, বাঙচিল, গাঙচশা এবং নডি ইত্যাদি। সংখ্যার হিসাবে চার গোত্রের প্রায় ১শ প্রজাতির পাখি রয়েছে। তার মধ্যে এই ‘লেসার নডি’ প্রজাতিটা বেশ ভালো অবস্থায় আছে। এটাই ইন্ডিকেট (নির্দেশনা) করে যে, এরা প্রকৃতির সাথে খুবই ভালো অবস্থায় আছে। ভালো অবস্থায় বলতে এদের সংখ্যা খুব বেশি যে কমেছে এমন নয়। অন্য প্রজাতির ক্ষেত্রে এটা খুবই রেয়ার (বিরল) ঘটনা। ‘বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল’ থেকে যে তথ্যগুলো আমি পেয়েছি সেটাই জানালাম।
এই প্রজাতির পাখি ভারত মহাসাগরে বসবাস করে এবং প্রজননের জন্য এরা সেশেলস বা মালদ্বীপ অঞ্চলে যায়। এছাড়া সোমালিয়ার কয়েকটি দ্বীপেও এরা প্রজনন করতে যায় বলে ধারণা করা হয়। প্রজননকালের বাইরে এ পাখি আরব, মাদাগাস্কার ও তানজানিয়ার উপকূলে দেখা যায়। শ্রীলঙ্কা আর বঙ্গোপসাগরে এদের চলাচল একেবারেই বিরল বলে জানান সীমান্ত দীপু।
তিনি বলেন, এমন প্রজাতির পাখিগুলো যদি আমাদের অঞ্চলগুলোতে দেখা যায় তবে সেই পাখিগুলোকে কোনোভাবেই বিরক্ত না করা। পার্টিকলারলি ধরেন, নতুন পাখি দেখলাম, অনেক ফটোগ্রাফার দলবেঁধে সেখানে গিয়ে হাজির হয়। ছবি ধারণ করতে গিয়ে ওদের ডিসটার্ব করে। পাখিগুলোকে বিরক্ত না করে তাদের মতো করে যদি থাকতে দেওয়া হয় এবং নিরাপদ ডিসটেন্স (দূরত্ব) থেকে তাদের দেখা হয় তাহলে ওরা আস্তে আস্তে খাবার-দাবার এবং প্রয়োজনীয় বিশ্রাম শেষে তাদের আবাসস্থলে ফিরে যায়। এটাই আমাদের করণীয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪
বিবিবি/এএটি