ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

জলবায়ু বিতর্কে সবার ইতিবাচক ভূমিকা প্রয়োজন

জেনিফার মরগান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১২
জলবায়ু বিতর্কে সবার ইতিবাচক ভূমিকা প্রয়োজন

ঢাকা : অনিশ্চয়তার দোলাচলে শেষ হলো কাতারে অনুষ্ঠিত দুই সপ্তাহব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক সম্মেলন।
কিন্তু বিতর্কে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার ব্যাপারটি পাত্তাই পেল না।

যদিও এই সম্মেলন শেষে দাবি করা হয়েছে, এবারের আলোচনার মাধ্যমেই কিয়োটো প্রটোকল চুক্তি বাস্তবায়নের পথে খানিকটা এগিয়ে গেছে এবং ক্ষতিকর গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে সবাই প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে।

এছাড়া ২০১৫ সালের মধ্যে জলবায়ু চুক্তিতে পৌঁছাতে দেশগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

তবু, এটাকে খানিকটা অর্জন বলা যায় বৈকি!

বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতোমধ্যেই অনুভূত হচ্ছে। একটি দিন অতিবাহিত হচ্ছে আর আমরা ক্রমেই অস্থিতিশীল জলবায়ুর অন্ধকার ভবিষ্যতে নিজেদের আবদ্ধ করে ফেলছি।

এই আলোচনার আগে নিজেদের একটা প্রশ্ন করি, অব্যাহত জলবায়ু পরিবর্তনে এসব আন্তর্জাতিক বৈঠক কোনো সুফল বয়ে আনতে পারছে? উত্তরটা দেয়া বোধ হয় বেশ কঠিন!

কঠিন তো হবেই, যেখানে স্যান্ডির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত যুক্তরাষ্ট্র, বোফার আঘাতে নিহত শতো ফিলিপাইনিজের লাশ ভাসে।

তাছাড়া আর্কটিকের বরফ গলা মানচিত্রের কথা শুনলে তো ভয়ে লোম খাড়া দেবে!

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা দেখেছি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস, ঝড়, হারিকেন, টাইফুনের নির্মমতা।

এর মধ্যে খুব সাম্প্রতিক ও নির্মম উদাহরণ গত সপ্তাহে ফিলিপাইনে আঘাত হানা ভয়ংকর টাইফুন বোফা। যেটি কমপক্ষে ৬০০ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। গৃহহারা করেছে হাজারো মানুষকে।

ফিলিপাইনে টাইফুন অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু দেশটির ইতিহাসে এটাই রেকর্ডকরা ভয়াবহ টাইফুন এবং নিয়মিত আঘাত হানার রেকর্ড ভেঙে এ বছরের শেষ দিকে এটি আঘাত হানল।

তেমনি, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা হারিকেন স্যান্ডি কেড়ে নিয়েছে শতাধিক প্রাণ, বাস্তহারা করেছে হাজারো মানুষকে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর ভয়াবহ জলবায়ু পরিবর্তনের সাধারণ উদাহরণ এসব!

এ দিকে, জলবায়ু নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। “তাপ কমাও” শীর্ষক ঐ প্রতিবেদনে আগাম ধারণা দেওয়া হয় সাধারণ তাপমাত্রার চেয়ে মাত্র ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে কী ঘটবে পৃথিবীতে। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে, বাড়বে ঘূর্নিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা। সাগর পৃষ্ঠের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে, চারিদিকে মহামারি আকার ধারণ করবে যেকোনো ধরনের রোগ।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, উদ্বেগজনক হারে বরফ গলছে, আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা।
Climate-change
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিবেশবাদী সংগঠন ন্যাশনাল অসিয়ানিক অ্যাটমোসপেয়ারিক এডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া) একটি গবেষণায় দেখিয়েছে, এই শতাব্দীর শেষ দিকে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা গড়ে সাড়ে ছ’ফুটের বেশি বাড়তে পারে।
তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র এ বছর দেশটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। এই উন্নত রাষ্ট্রটির দুই তৃতীয়াংশে ইতোমধ্যেই খরা অনুভূত হচ্ছে।

জ্বালানি তেলের প্রতি অধিক নির্ভরতা বিশ্বের জন্য হয়ে উঠছে আরেকটি টার্নিং পয়েন্ট।

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রর আরেকটি পরিবেশবাদী সংগঠন ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইন্সটিটউট (ডব্লিউআরআই) সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে, বিশ্বব্যাপী আরও ১২ শ’ নতুন কয়লা উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। আর ২০১১ সালের গ্যাস নিঃসরণ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

এতসব দুর্যোগের কথা কি জলবায়ুর অব্যাহত পরিবর্তন ঠেকাতে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ নয়! তাই আমরাও বলি, বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তি কঠোর হওয়া উচিত। আর এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘই একমাত্র ভরসা।

সব রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখার জন্য স্বচ্চতা ও জবাবদিহিতার ব্যাপারটি জোরদার করতে পারে জাতিসংঘ।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, জাতিসংঘ তার সদস্য দেশসমূহের রাজনৈতিক ইচ্ছার উপরই নির্ভরশীল। এদের সিদ্ধান্তের বাইরে এটি কিছুই করতে পারে না।

তবে, সাধারণ জনতার বৃহৎ পদক্ষেপ ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে উদ্যোগগ্রহণীকারীদের এবং প্রেরণা যোগাতে পারে জলাবায়ু ঠেকাতে এ চুক্তির বাস্তবায়নে।

এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন ব্যবসায়ী নেতা, সরকারি কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের জনতার অংশগ্রহণ। অর্থাৎ জলবায়ু বিতর্কে এদের সবার জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন।

আশার কথা হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। মানুষের এমন সচেতনতা জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ভূমিকা পালন করবে সেটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

আবার দোহার কথায় ফিরে আসি, এই সমস্যার সমাধানে এসব বৈঠক খুব শিগগির কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না।

ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণের মাধ্যমে যে ভয়াবহ জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে তা রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়। জনতার ক্ষমতার প্রকাশের শ্রেষ্ঠ সময় এখন। বিশ্ব রক্ষায় এই সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।

দোহায় যে প্রাথমিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে, আমাদের উচিত কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে সেসব সিদ্ধান্তকে একটি শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত করা।

একটি সহনীয় বৈশ্বিক জলবায়ুর জন্য, একটি সুন্দর পৃথিবীর জন্য, শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য, আমাদের ভালোবাসার পৃথিবীর জন্য!

(লেখক : পরিচালক, ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইন্সটিটউট)

বাংলাদেশ সময় : ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১২
সম্পাদনা : হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।