নির্জনতাই বেশি পছন্দ তাদের। যেখানে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে, সেই জায়গাগুলোই অধিক প্রিয়।
তবে মজার ব্যাপার হলো, এই পাখিগুলো অন্য পাখির মতো গাছের ডালে খুব একটা বসে না। মাটির কোমলতায় পা ফেলে ফেলে কাটিয়ে থাকে দিবসের প্রতিটি মুহূর্ত।
চা বাগানের আশেপাশে যেসব অব্যবহৃত এবং নির্জন জলাভূমি রয়েছে, যেখানে মাঝে মাঝে একটি বিশেষ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। খাবারের খোঁজে কোমল ঘাসের ওপর আপন মনে ঘুরে বেড়ায় এরা। এদের রয়েছে গাঢ় বাদামি রঙের পিঠ, কালো রঙের বুক এবং সাদা রঙের পেট। মাথা, ঘাড় ও গলার রং কালো। ঠোঁটের লাল টকটকে লতিকা দুচোখের লাল রঙের মোটা বৃত্তের আকর্ষণীয় চিহ্ন রয়েছে।
লম্বা হলুদ পায়ের এই বিশেষ পাখির নাম হলো, ‘হট্টিটি’। ইংরেজিতে রেড-ওয়াটল্ড ল্যাপউইং (Red-wattled Lapwing) বলে। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩ সেন্টিমিটার। জলাধারের আশেপাশে জোড়ায় জোড়ায় অথবা ছোট দলে এদের প্রায়ই চরে বেড়াতে দেখা যায়। অবশ্য শীতে এরা বিশাল দল গঠন করে জলাভূমির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।
হট টিটির খাদ্য তালিকায় রয়েছে- জলাভূমির ছোট মাছ, ঘাসের উপরে থাকা ছোট ছোট পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, ছোট ব্যাঙ, ব্যাঙাচি এবং কেঁচো। লম্বা ঠোঁটের সাহায্যে নরম মাটি খুঁড়ে কেঁচোকে টেনে বের করে মুহূর্তে গিলে ফেলতে ওরা বেশ দক্ষ।
বাসা করার ক্ষেত্রেও খোলা মাঠ এদের প্রথম পছন্দ। এজন্য এদের বলা হয় ‘মাঠের পাখি’। এরা বাসা তৈরি করতে সময় নেয় ৬ থেকে ১০ দিন। গতানুগতিক পাখির বাসার মতো বাসা বানায় না এরা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ঢিল, শামুক, নুড়ি ইত্যাদি দিয়ে সাজায় বাসা। ডিম পাড়ে প্রায় চারটি। প্রায় তিন সপ্তাহ পর ডিম থেকে ছানা ফুটে।
হট্টিটিরা জোরালো কণ্ঠের অধিকারী পাখি। ‘হট্টিটি হট্টিটি’ স্বরে সাইরেনের মতো চিৎকার করে ডাকতে পারে। শুধু তা-ই নয়, নানান বিপদ বা অনিরাপত্তায় ওরা আকাশে উড়াল দিয়ে চেঁচিয়ে ডাকতে থাকে। জলাভূমি ছাড়াও নির্জন চারণভূমি, মাঠ, ময়দানে এদের জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করতে দেখা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) ‘লেড লিস্টে’ এই প্রজাতিটিকে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
বিবিবি/এএটি