জাবি: সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে প্রকৃতিবাদী সংগঠন ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ উদ্যোগ’র ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছালেহ আহাম্মদ, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ কামরুল আহসান, মোস্তফা নাজমুল মানছুর, ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামানসহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সহযোগী অধ্যাপক ছালেহ আহাম্মদ বলেন, “রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হলে বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হবে; যা সুন্দরবনসহ মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে অ্যাসিড বৃষ্টিও হতে পারে। ”
ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রশাসনের কিছু ব্যক্তির নির্বুদ্ধিতার কারণে ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার পথে। ক্যাম্পাসে যে সব অবকাঠামোগত বা লেক খনন করা হচ্ছে, তাতে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। গাছ লাগিয়ে এই পরিবেশ ফিরে পাওয়া যাবে না।
ক্যাম্পাসের দক্ষ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়াই এ কাজ করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
গোলাম রব্বানী বলেন, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। অবস্থা দেখে মনে হয়, ভারতীয় কোম্পানির এজেন্ডা বাস্তবায়নেই এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, এটি নির্মিত হলে ভারতে উৎপাদিত নিম্নমানের কয়লার একটি লাভজনক বাজার নিশ্চিত হবে। জনস্বার্থ বিরোধী এই প্রকল্প আমরা অবশ্যই প্রতিহত করবো। ”
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুর রহমান বলেন, “আমরা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই, সরকার এটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারকে অনতিবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানাই। ”
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, “এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল, তা আজ প্রমাণিত। আমরা এ মানববন্ধনের মাধ্যমে সরকারকে এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানাই। ”
রামপালে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে এখান থেকে প্রতি বছর সাত লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ফ্লাই অ্যাশ উৎপাদিত হবে, যার মাধ্যমে পাশের নদ-নদী দূষিত হবে। তাছাড়া এর জন্য সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে যে পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, তাতে বনে বসবাসকারী প্রাণীদের অস্তিত্ব হুমকির কারণ হিসেবে দাঁড়াতে পারে বলে মানববন্ধনে জানানো হয়।
‘তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ-বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’,‘বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ’সহ বেশ কয়েকটি সংগঠন মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে।
আগামী মঙ্গলবার সকাল নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়ামঞ্চ এলাকায় বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি। বিপন্ন প্রজাতির হারিয়ে যাওয়া ফলজ, বনজ ও ওষুধি বৃক্ষরোপন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরাও এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৩
সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর