ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কার্বন নির্গমনের হার বাড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে

নূসরাত খান, এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৩
কার্বন নির্গমনের হার বাড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে

ঢাকা: উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কার্বন নির্গমনের মাত্রা বেড়েই চলেছে পুরো বিশ্বে। এক্ষেত্রে আগে উন্নত বিশ্বকে দায়ী করা হলেও এখন বাদ যাচ্ছে না উন্নয়শীল দেশগুলোও।



অর্থনীতিতে উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান গতি বলে দিচ্ছে এসব দেশে কার্বন নির্গমনের হার ২০৪০ সালের মধ্যে প্রায় ১২৭ শতাংশ বেড়ে যাবে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি শক্তি অধিদফতর-এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) এ তথ্য প্রকাশ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি অধিদফতর অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ ৪৫.৫ বিলিয়ন টন কার্বন নির্গত হবে। অর্থাৎ ২০১০ সালে ঠিক করে দেওয়া মাত্রা থেকে প্রায় ১৪.৩ বিলিয়ন বেশি কার্বন নির্গমন করবে। ২০১০ এর হিসাব অনুযায়ী পরিসংখ্যান করে বের করা হয়েছে,   ২০৪০ সালে কার্বন নির্গমানের হার বাড়বে ৪৬ শতাংশ।

অর্থনৈতিক কো-অপারেশন ও উন্নয়ন সংস্থা-ওইসিডি’র সদস্য উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ক্ষেত্রে তিন দশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে হেরে যাবে। আগামী বছরগুলোতে চীন ও ভারতের কার্বন নির্গমনের হারের ঊর্ধ্বগতি এই দূষণের ক্ষেত্রে বেশি দায়ী থাকবে, যা উন্নত দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করছেন ইআইএ’র সচিব অ্যাডাম সিমিনস্কি।  

ইআইএ’র প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ওইসিডি (অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা) অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর তীব্রতার হার ২০১০ থেকে ১ দশমিক ৯ শতাংশ কমে যাবে ২০৪০ সাল নাগাদ। আর এর বাইরের দেশগুলোর কার্বন নির্গমনের তীব্রতার হার কমবে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। যেসব দেশের কার্বন নির্গমনের তীব্রতার হার কম, তাদের জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর হার তত কমবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। এর হার প্রতি একক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল।

যদিও ওইসিডি সদস্য দেশ জাপানে ২০১১ সালের সুনামির পর কার্বন নির্গমনের হার বেড়ে গেছে। কারণ, পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে সেসময় ব্যাপক আকারের বিস্ফোরণ ঘটেছিল।

যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিকল্প জ্বালানি উৎস ব্যবহার করে কার্বন নির্গমনের হার কমিয়ে এনেছে। একইসঙ্গে পাশ্চাত্যের দেশগুলোও একই পন্থা অবলম্বন করছে বলে জানালেন জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ লিন্ডা ডোমান।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো অর্থাৎ বিশ্ব ব্যাংক, ইউরোপিয়ান বিনিয়োগ ব্যাংক উন্নয়নশীল দেশগুলোর কয়লাভিত্তিক জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরশীল প্রকল্পগুলোকে অন্য দেশে করার ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছে। যেগুলো পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করে এবং কার্বন কম নির্গত করে সে ধরনের প্রকল্পের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

এ ধরনের একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেক পরিবেশ সচেতন মানুষ ধারণা করছেন। বাংলাদেশে সম্প্রতি হাতে নেওয়া প্রকল্প রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র কার্বন নির্গমনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রেখে পরিবেশকে আরো বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিবে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত বিশেষজ্ঞমহল। এ ধরনের প্রকল্পই প্রকৃতপক্ষে অদূর ভবিষ্যতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কার্বন নির্গমনের হার বাড়াবে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটারের ভেতরে কোনো ধরনের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের পরিবেশ কোনভাবেই দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবেনা। তাই উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্বন নির্গমনের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে প্রথম কাতারে নিয়ে যাওয়া ঠেকাতে হবে। পরিবেশবান্ধব বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৩
সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।