ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লক্ষ্মী পাখি লক্ষ্মীপেঁচা

মীম নোশিন নাওয়াল খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৩
লক্ষ্মী পাখি লক্ষ্মীপেঁচা

শান্তশিষ্ট নিরীহ পাখি লক্ষ্মীপেঁচা। পেঁচাদের মধ্যে সবচেয়ে মিষ্টি দেখতে।

অন্যসব পেঁচারা ভয়ংকর দেখতে হলেও লক্ষ্মীপেঁচা কিন্তু তাদের মতো না মোটেও। বরং তার চেহারায় একটা মায়া মায়া হাসিখুশি ভাব আছে।

কেউ মুখ গোমড়া করে থাকলে তাকে আমরা তুলনা করি পেঁচার মুখের সাথে। কেন? কারণ পেঁচাকে দেখে মনে হয় সে বোধহয় সবসময়ই মুখ গোমড়া করে মন খারাপ করে আছে। এক্ষেত্রে লক্ষ্মীপেঁচা কিন্তু ব্যতিক্রম। আগেই বলেছি তার চেহারায় হাসিখুশি ভাব আছে। তার মুখের আকৃতি একদম অন্যরকম। উদাহরণ দিতে গেলে বলা যায়, অনেকটা পানপাতার কাছাকাছি আকৃতির, বা বলতে পারি বানরের মতো চেহারা। লক্ষ্মীপেঁচা হিন্দু ধর্মের দেবী লক্ষ্মীর বাহন। m111

লক্ষ্মীপেঁচার মুখবয়ব বানরের সাথে অনেকটাই মেলে বলে একে বানরমুখো পেঁচা বলেও ডাকা হয়। ইংরেজি নাম Barn Owl. বৈজ্ঞানিক নাম Tyto Alba.

লক্ষ্মীপেঁচার মুখমণ্ডল সাদা রঙের, চোখ উজ্জ্বল, চকচকে কালো রং। মাথাটা তুলনামূলক বড়, গোলাকৃতির। ঘাড়-পিঠ-মাথা ও পাখার উপরের দিকে সোনালি ও ধূসর রঙের মিশ্রণ। বুক-পেট-গলা সাদা রং। শরীরের নিচের দিকে হলুদ রঙের আভা আছে। ডানার ভেতরের দিক সাদা, লেজের তলা লালচে হলুদ। বাঁকানো ধারালো নখ, লম্বাটে ডানা আর ছোট লেজ।

অন্য পেঁচাদের মতোই লক্ষ্মীপেঁচাও নিশাচর পাখি। দিনের বেলায় ঘাপটি মেরে বিশ্রাম নেয়, রাত হলেই তার ওড়াওড়ি শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই লক্ষ্মীপেঁচা রয়েছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও লক্ষ্মীপেঁচা দেখা যায়।

ইঁদুর লক্ষ্মীপেঁচার প্রধান খাবার। কাঠবিড়ালি, সাপ, ব্যাঙ, পাখি, পাখির ডিম ও বাচ্চা এবং কাঁকড়াও খেয়ে থাকে তারা। বিষধর সাপও ধরে লক্ষ্মীপেঁচা। তবে সবচেয়ে পছন্দের খাবার সব জাতের ইঁদুর।

লক্ষ্মীপেঁচা মাপ হয় ৩৪-৩৬ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির চেয়ে মেয়ে পাখি তুলনামূলক বড় হয়। কি কি ক্রিচ ক্রিচ- এ ধরনের ধাতব শব্দে ডাকে লক্ষ্মীপেঁচা।

m22লক্ষ্মীপেঁচা সারা বছরই বাসা বাঁধে, তবে বর্ষাকালে নয়। বছরে দুবার ডিম দেয়। ডিমের রং সাদা। ডিম নষ্ট হলে কিছুদিন পর আবারো ডিম পাড়ে। লক্ষ্মীপেঁচা ডিম দেয় ৬টি থেকে ৭টি। কখনো ৯টি ডিমও পাড়ে। পুরুষ ও মেয়ে পাখি উভয়েই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে ৩০ থেকে ৩৩ দিন লাগে। জন্মের ৫২-৫৫ দিন পর উড়তে শেখে লক্ষ্মীপেঁচার ছানারা।

দিনে লুকোবার জায়গাকেই বাসা হিসেবে ব্যবহার করে দিব্যি কাটিয়ে দেয় লক্ষ্মীপেঁচা। কখনো কখনো মানুষের বাড়ির ভেতরেও বাসা করে তারা।  

লক্ষ্মীপেঁচা উপকারী পাখি। ইঁদুর খেয়ে কৃষকের উপকার করে। একই সঙ্গে সে লক্ষ্মী পাখিও বটে। আর সেকথাই বুঝি সে বলতে চায় তার ভাষায় মাঝরাতে ডাকাডাকি করে-ক্রিচ ক্রিচ ক্রিচ...

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৩
এএ/আরআইএস[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।