ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হুমকির মুখে ভোলার উপকূলের জীব-বৈচিত্র্য

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৩

ভোলা: ভোলার উপকূলে ক্রমেই ধেয়ে আসছে সাগরের লোনা পানি। পানির উচ্চতা বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জমছে পলি।



সাগরের লোনা পানি ও পলির প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছে জীব-বৈচত্র্য। মরে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও বৈচিত্র্যময় প্রাণী হরিণ।

গত এক বছরে ২৪টি হরিণসহ শতাধিক পশু-পাখি মারা গেছে বলে বন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
 
দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে এ উপকূলের চিত্র। আর পরিবেশের বিরুপ প্রভাব নিয়ে জনমনে দেখা

 দিয়েছে নানা প্রশ্ন। হঠাৎ করেই পরিবেশের এমন পরিবর্তনে উপকূলের মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সাগরের নিচু এলাকায় প্রবেশ করছে লোনা পানি। পানির সঙ্গে সাগরের নিচ থেকে বালু এসে পলিতে জমতে শুরু করছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে গাছ বেড়ে ওঠতে না পেরে ক্রমেই মারা যাচ্ছে।

অন্যদিকে, খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে বনের পশু-পাখিও মারা যাচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে এ অঞ্চলের জীব-বৈচিত্র্য।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেষে ঢালচর, কালকীনি, পচা কোড়ালিয়া, চর পিয়াল ও চর কুকরী-মুকরী। এ সব বনাঞ্চলের মধ্যে ১শ’ হেক্টর জায়গায় সাগরের লোনা পানি প্রবেশ করে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে বন বিভাগে। এ সব বনাঞ্চলে গত তিন বছরে এক লাখেরও বেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মারা গেছে। এরমধ্যে গত আট মাসে কেওড়া, কাস্টন, বলা ও কাকড়া প্রজাতির প্রায় ৩০ হাজার গাছ মারা গেছে।

বিভাগীয় বন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাগরের
লোনা পানির প্রভাবে বন বিভাগের নষ্ট হয়ে যাওয়া ১শ’ হেক্টর এলাকায় ২শ’ প্রজাতির পাখি, প্রায় ১৪ হাজার হরিণ, বানর, উদ বিড়াল, সাপ ও শিয়ালসহ প্রায় ৫০ হাজার পশু-পাখির অবাসস্থল। এ সব পশু-পাখি এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে।

সাগর উপকূলের চর কুকরী-মুকরীর বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, সাগরের লোনা পানি প্রবেশ করায় কৃষকদের অবাদ কমে যাচ্ছে। মরে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
 
এনজিও কর্মী আসমা মাহমুদ ও শিরিনা বলেন, পরিবেশের বিরুপ প্রভাবে পথে ঘাটে প্রায়ই পড়ে থাকছে পশু-পাখি। তাছাড়াও গরমের দিন প্রচণ্ড গরম এবং শীতের দিনে তীব্র মাত্রায় শীত পড়ছে। এ কারণে রোগ বালাই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম পাটোয়ারী বলেন, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব পড়েছে ঢালচরে। জমির আবাদ কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় পশু-পাখিও মারা যাচ্ছে। নদী ভাঙনও বেড়ে গেছে।

মনপুরা মহিলা কলেজের প্রভাষক মাহাবুবুল আলম শাহিন জানান, খাদ্য ও পানির অভাবে হরিণ লোকালয়ে আসছে। সাগরের লোনা পানিতে চাষাবাদ মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিভাগীয় সাবেক বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাঈদ আলী বলেন, সাগরের লোনা পানি উপকূলে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। লোনা পানি প্রবেশ করায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় এক লাখ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মারা গেছে।

তিনি বলেন, শুধু গাছেই নয় সব ধরনের পশু-পাখির ওপর এর প্রভাব পড়ছে। শুধু খাদ্য ও লোনা পানির কারণে গত বছরে বেশ কিছু হরিণ মারা গেছে।
 
সুত্র জানায়, নদীতে অপরিকল্পিত বাঁধ দেওয়া, সাগরের লোনা পানি উপকূলে প্রবেশ, অস্বাভাবিকহারে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়া এবং ডুবচর জেগে ওঠার কারণে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে জীব-বৈচিত্র্যের ওপর।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোল্লা মিজানুর রহমান বলেন, দিন দিন সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমগ্র উপকূলের ওপর এর প্রভাব পড়ছে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উপকূলে বেশী পরিমাণে গাছ লাগানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৩
আরএ/বিএসকে- [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।