ঢাকা: বিশ্বায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে এখন আমাদের বসবাস। শিল্পায়ন, প্রযুক্তির অপরিকল্পিত ব্যবহার আর গ্রিন হাউজ ইফেক্টের ফলে বাতাসে বেড়ে গেছে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ।
দৈনন্দিন জীবনে আমরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করি। সেইসঙ্গে বিভিন্ন সামগ্রী নষ্ট করে ফেলে দিই। কিন্তু এই জিনিসগুলোকে আমরা পুনরায় ব্যবহার্য করে তুলতে পারি রিসাইকেলিং পদ্ধতির মাধ্যমে।
সোনার খনিতে ৬০ টন মাটি কুপিয়ে যে পরিমাণ সোনা পাওয়া যায়, এক টন মোবাইল ফোন থেকে কিন্তু সমপরিমাণ সোনা পাওয়া যেতে পারে। অথচ আজ তা বড়জোর বাড়ির আবর্জনা হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে।
আমাদের বাসাবাড়িতে আমরা এমন অনেক কিছুই ফেলে রাখি যা আপাতদৃষ্টিতে ফেলনা মনে হলেও বৃহত্তর স্বার্থে রিসাইকেল করে সেগুলো ব্যবহার করা হলে আরো বেশি উপযোগিতা পাওয়া যাবে।
এছাড়াও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা জায়গায় আমরা ব্যবহার করি কাগজ। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দৈনিক সংবাদপত্র, বিভিন্ন বইপত্র ও লেখালেখির কাগজ। প্রতিদিনের এই কাগজের ব্যাপক চাহিদার যোগান দিতে প্রতি নিয়তই উজাড় হচ্ছে আমাদের বন জঙ্গল, গাছপালা। পরিবেশের এমন অনেকগুলো বিষয় নিয়েই কাজ শুরু করছে ‘গ্রিন ফাইটারস’।
প্রতিদিনই আমরা আমাদের নিত্য ব্যবহার্য যেসব জিনিস ফেলে দেই অথবা নষ্ট করে ফেলি এগুলোই আবার বিভিন্ন বস্তু উৎপাদনের কাঁচামাল হিসবে ব্যবহার করা যায়। আমাদের বাসা-বাড়ি থেকে যেসব সামগ্রী ফেলে দেই সেগুলোই গ্রিন ফাইটার্সের ‘সবুজ উদ্যোক্তা’রা সংগ্রহ করবে, বিনময়ে প্রদানকারী পাবে একটি লাইফ স্টাইল কার্ড যার মাধ্যমে সে তার জীবন যাত্রার মানকে নিয়ে যেতে পারবে এক অন্যরকম উচ্চতায়। এভাবেই মূলত এই লাইফস্টাইল বিজনেস মড্যুলটি কাজ করবে।
গ্রিন ফাইটার্স-এর এই উদ্যোগের ফলে দেশের তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ এবার যুক্ত হবে দেশের বিদ্যুৎ ও পানির অপচয় রোধ করার নতুন একটি কাজে। সেইসাথে চাকরি বাজারের মন্দা এই সময়ে খুলে যাচ্ছে নতুন একটি বিশাল কর্মসংস্থানের দুয়ার।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে শুধুমাত্র ঢাকায় কর্মসংস্থান হচ্ছে ৪০০০ জন মানুষের এবং তৈরি হবে ৪০০ জন সবুজ উদ্যোক্তা। এর ফলে সমাজের শিল্প ব্যবস্থায় সৃষ্টি হবে নতুন এক সবুজ বিপ্লবের সূচনা, যার ফলে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশ আরো অনেক বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে।
এছাড়াও বিশ্ব অর্থনীতির আলোচনায় এখন কোন দেশ কতো সস্তায় উৎপাদন করতে পারে, সেই প্রসঙ্গই গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু তার পাশেই রয়েছে কাঁচামালের দাম ও সরবরাহের প্রশ্ন। একটি জরিপ থেকে জানা যায়, পোশাক শিল্পে প্রতি বছর যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় তা মোট উৎপাদনের খরচের ৪৫ শতাংশ। সেক্ষেত্রে শ্রম খাতে খরচা মাত্র ১৮ শতাংশ। ঠিক একইভাবে গ্রিন ফাইটার্স এর অন্যতম উদ্দেশ্য- আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এমন নানা ধরনের ফেলনা জিনিসপত্র রিসাইকেলিংয়ের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহারোপযোগী করে গড়ে তোলা। আর এতে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের উৎপাদন খরচ কমে আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে দেশকে অনন্য একটি স্থানে নিয়া যাওয়া সম্ভব হবে।
‘গ্রিণ ফাইটার্স লাইফ স্টাইল কার্ড’, বিশ্বের প্রথম সাস্টেইনেবল সবুজ উদ্যোগের মড্যুল, যার উদ্যোক্তা শেখ জাভেদ মাহমুদ। এই মড্যুলের মূল উদ্দেশ্য বাতাস থেকে কার্বনের পরিমাণ কমানো, ইলেক্ট্রিসিটি এবং পানির অপচয় কমিয়ে আনা।
শেখ জাভেদ মাহমুদ বলেন, ‘গ্রিন ফাইটার্স’, এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের পানি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের অপচয় রোধ করার পাশাপাশি বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমিয়ে আনা যাবে বলে আমরা আশা করছি। যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এই পৃথিবীকে আমরা বসবাসযোগ্য করে তুলে যেতে পারি। এজন্যই এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ এর শুভ সুচনা হচ্ছে আগামী ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৩
জেএ/এমজেএফ/এসআরএস