ঢাকা: পাখি বিশেষজ্ঞ সায়েম ইউ চৌধুরী। বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির জন্য একটি নিরাপদ নিবাস গড়তে অবাধে ছুটে চলছেন তিনি।
এই মুহূর্তে তিনি পরিবেশ সংরক্ষণকারী সংগঠন আরএসপিবি ও ওয়েটল্যান্ড ফর লাইফ-এর (ডব্লিউ ডব্লিউ টি) অধীনে চামচঠুঁটো বাটান পাখির উপর গবেষণা করছেন।
চামচঠুঁটো বাটান বা স্পুনবিল্ড স্যান্ড পাইপার একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পাখি। এই পরিযায়ী পাখির বসবাস উপকূলীয় এলাকার সৈকতের কাদাচরে। বিশ্বে ‘মহাবিপন্ন’ বলে বিবেচিত এ চামচঠুঁটো বাটান পাখির বিচরণভূমি মূলত চীন হয়ে মায়ানমার ও বাংলাদেশ। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে ২০০৯ সালে তার এ কার্যক্রম শুরু হয়।
বর্তমানে পুরো বিশ্বে এ প্রজাতির পাখি রয়েছে দু’শরও কম। তবে এবছরের জরিপ শেষে সায়েম জানান, সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তার প্রধান কারণ, রাশিয়ায় বেশ কিছু কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে একটি আন্তর্জাতিক টাস্ক ফোর্স। সাফল্যের বিষয় এই যে, এই সদ্য প্রস্ফুটিত পাখিগুলোকে সুস্থভাবেই বিচরণ করতে দেখা গেছে চীনে।
চীনের চামচঠুঁটো বাটন পাখি সংরক্ষণের সংগঠনটি এবার বলেছে, আগের তুলনায় পাখির সংখ্যা বেশি গণনা করা গেছে। বিগত দশ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম চামচঠুঁটো বাটান পাখির সংখ্যা ১৫০ জোড়ায় গিয়ে ঠেকেছে। একটু ঠাণ্ডা বাড়লেই পাখিগুলো চীন ত্যাগ করে মায়ানমার ও বাংলাদেশের দিকে আসতে শুরু করবে।
আমাদের দেশে পুরো শীতকাল জুড়েই উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে সোনাদিয়া দ্বীপে এই পরিযায়ী পাখি চরে বেড়ায়। শেওলা বা খাটো উইলো গাছে ঢাকা প্রান্তরের মাটিতে ঘাস, পাতা ও শেওলা দিয়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। একসঙ্গে এরা চারটি পর্যন্ত ডিম দেয়। ২০ দিনের মাথায় ডিম থেকে ছানা বের হয় এবং চার সপ্তাহের মাথায় ছানা বাসা ছেড়ে উড়তে শেখে।
এ পাখির দৈর্ঘ্য ১৭ সে.মি, ডানা ১০ সে.মি, ঠোঁট ২.২ সে.মি, ঠোঁটের চামচের মতো অংশ ১.১ সে.মি, পা ২.১ সে.মি ও লেজ ৩.৮ সে.মি।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এ পাখিটি সংরক্ষিত। মূলত রামসার এলাকায় এই পাখির বিচরণ। সারাবিশ্বেই এ প্রজাতির পাখি সংরক্ষণের ব্যাপারটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে।
সায়েম এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, চামচঠুঁটো বাটান পাখির জন্য সোনাদিয়া দ্বীপ বিশ্বের অন্যতম আবাসভূমি। তাই এ দ্বীপের পাখি ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয়ভাবে যেমন উদ্যোগ প্রয়োজন, তেমনি সরকারকেও প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই পাখি সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি জানান, অক্টোবর মাসে নিয়মিত জরিপের কার্যক্রম নিয়েই তিনি গিয়েছিলেন মায়ানমারে। সেখানে নতুন করে তেমন কোনো চামচঠুঁটো বাটান পাখি না দেখলেও ত্রিদেশীয় গবেষণা ও জরিপে উঠে এসেছে যে, এই পাখির সংখ্যা ঊর্ধ্বগতির দিকে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক এই টাস্কফোর্স চামচঠুঁটো বাটান পাখির সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণসহ এলাকার মানুষকে পাখি শিকারের অভ্যাস থেকে বিরত রাখার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে।
আর এই উদ্যোগের কারণে কিছুটা হলেও সুফল পেয়েছে বলে জানালেন গবেষণারত তরুণ এই পাখি বিশেষজ্ঞ।
সায়েম বলেন, এ ধরনের দুর্লভ প্রজাতির পাখি আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। হঠাৎ করেই যখন ২০০৮ সালের দিকে পুরো বিশ্বেই এই প্রজাতিটি কমে আসতে শুরু করে। এরপর আন্তর্জাতিকভাবে ‘স্পুনবিল্ড স্যান্ডপাইপার কনসারভেশান টাস্কফোর্স’ কাজ শুরু করে পাখিটির বিচরণক্ষেত্রগুলোতে।
প্রথমেই পাখি শিকার থেকে বিরত রাখার জন্য সৈকতের পাড়ে বসবাসরত পাখি শিকারিদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করে তাদেরকেই দুর্লভ পাখি সংরক্ষণে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারা সফল হয়। এভাবে কাজ করে গেলে আগামীতে চামচঠুঁটো বাটান পাখির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশাবাদী সায়েম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৩
এনকে/এএ/এসআরএস