ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

উপকূল থেকে উপকূল

পানির রাজ্যে পানি নেই!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৩
পানির রাজ্যে পানি নেই!

লক্ষ্মীখালী, গাবুরা (শ্যামনগর, সাতক্ষীরা) ঘুরে এসে : পানির রাজ্যে পানি নেই। এক কলস খাবার পানির জন্য হাঁটতে হয় ৪-৫ কিলোমিটার।

অথচ গোটা এলাকাটির চারপাশ দিয়ে বয়ে গেছে কয়েকটি নদী। দুর্যোগে উত্তাল হয়ে উঠে এই নদী এলাকা পানিতে ভাসায়। অথচ খাবার পানি পায় না এলাকার মানুষ। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা গোটা ইউনিয়নবাসীর পানির কষ্ট পারেনি লাঘব করতে।  

এই চিত্র সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার। ইউনিয়নের হাজারো মানুষ বছরের পর বছরের পানিকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। লবণাক্ততার সমস্যায় ভোগা এ এলাকার মানুষের পানি সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর।


লক্ষ্মীখালী গ্রামের জরিনা খাতুন এক কলস খাবার পানি সংগ্রহে প্রতিদিন পাঁচ কিলোমিটার পথ হাঁটেন। আসা-যাওয়ায় যাতায়াত দশ কিলোমিটার। যেতে আসতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। এক কলস পানিতে দিন পার হয় না বলে একই সঙ্গে পানি আনতে যান আরও দু’তিন জন।

দশ নম্বর সোরা গ্রামের মো. ইদ্রিস মোড়লের স্ত্রী আছমা খাতুনের ঘরে ঢুকেই বোঝা যায় পানির সমস্যা তাদের কতটা সংকটে রেখেছে। ঘরের ভেতরে কলসি, ড্রাম, থালাবাটি এমনকি পলিথিনে করেও পানি সংরক্ষণ করা হয়েছে। এদের ঘরে একফোঁটা পানির অনেক মূল্য। নারী-পুরুষ ও শিশুরা পায়ে হেঁটে পানি আনে, আবার কখনো ড্রাম ভরে ভ্যানে করেও আনে। তাতে পানির দাম আরও বেড়ে যায়।

আছমা খাতুন জানান, কিনে পানি আনতে হয় বলে চাহিদামতো পানি ব্যবহার করতে পারি না। পানি না থাকলে রান্না বন্ধ থাকে। আশাপাশের নদীর পানি নোনা। এ দিয়ে কখনো কখনো থালাবাসন ধোয়ার কাজ করা হয়। অনেকে সংকট কাটাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে রাখেন। তবে এখন অনেকের বাড়িতেই সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি ফুরিয়ে গেছে।

এলাকা ঘুরে জানা যায়, ঘরে একবেলা খাবার যোগাড়ের চেয়েও এই এলাকার মানুষের খাবার পানি যোগাড়ে বেশি সমস্যা। চাল, ডাল, নুন, তেল সবাই যোগাড় হলো, কিন্তু ঘরে খাবার পানি নেই। এর মানে সবকিছুই অচল।

গোসল, রান্না করা, থালাবাসন ধোয়া এমনকি গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগির পিপাসা মেটাতেও ভরসা দূর থেকে আনা এই পানি।

লক্ষ্মীখালী, চাঁদনিমুখা, দশ নম্বর সোরা গ্রামে ঢুকতে বাসিন্দারা একই সমস্যার কথা জানান, পানির অভাব।

এই সংকট নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি বলে এলাকাবাসী জানান। তারা বলেন, নলকূপ বসানো হলেও মিষ্টি পানি ওঠে না।

১২০ ফুট পর্যন্ত পাইপ বসিয়ে দেখা গেছে পানের যোগ্য পানি নেই। পর্যাপ্ত পুকুর ও পিএসএফ (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) নেই। ইউনিয়নের কিছু এলাকায় পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেয় হলেও তা খুবই সীমিত।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র বলছে, ইউনিয়নের ৩ নম্বর ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড বাদে বাকি এলাকার মানুষ পুকুরের পানির ওপর নির্ভরশীল। অনেক স্থানে পুকুর কাছে নেই। লক্ষ্মীখালী, খলিসা বুনিয়া, দশ নম্বর সোরা, চাঁদনিমুখা, নয় নম্বর সোরা, ডুমুরিয়া, চকবারা, খোলপেটুয়া, গাবুরা ও জালিয়াখালী গ্রামে পানির সংকট সবচেয়ে বেশি।

সংকটাপন্ন এলাকার মানুষ পুকুরের পানি ব্যবহার করে। পুকুরের পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ১২টি পিএসএফ রয়েছে। এগুলো সচল থাকলে পুকুরের পানি ফিল্টারের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়, কিন্তু অচল হয়ে গেলে পুকুরের পানি সংরক্ষিত থাকে না। তখন সমস্যা বেড়ে যায়। অন্যদিকে ইউনিয়নের পারসেমারী ও গাবুরা ইউনিয়নে দু’টি পানি সরবরাহ ট্যাংক রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ও চাঁদনিমুখা গ্রামে রয়েছে দু’টি সংরক্ষিত পুকুর, এর পানি কেবল খাবারে ব্যবহৃত হয়।    

এলাকাবাসী বলেন, আইলার পর এ এলাকায় পানি সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করে। দেখা দেয় নানা রোগ-বালাই। সে সময় সংকট নিরসনে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে কিছু এলাকায় পানি সংকট লাঘবের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এখনও এলাকার বহু মানুষের প্রধান সমস্যা পানির অভাব।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।