ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

তীক্ষ্ম দৃষ্টির ‘অম্বর-চুটকি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৭
তীক্ষ্ম দৃষ্টির ‘অম্বর-চুটকি’ ডালে বসে আছে অম্বর-চুটকি। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

মৌলভীবাজার: সবুজ গাছ আর পাতার রাজ্যে যেন এক বিন্দু নীল! নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে একা। উড়ে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। শুধুই একমনে এদিক-ওদিক দূরে-কাছে দৃষ্টি নিক্ষেপ।

নীলের এ ঘন সম্ভারই তাকে প্রকৃতিতে বিশেষত্ব দান করেছে। চিনে নিতে অসুবিধে হয় না তাই পাখিটিকে।

তার এমন ঘন নীল সৌন্দর্য বরাবরই মনকে রাঙায়।

ক্ষুদ্র হলেও তার কর্মশক্তি অতি প্রখর! বিশ্বস্ত ডানায় পাড়ি দিতে পারে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটারের উড়ন্ত পথ! তবে একবারে নয়, একটু একটু করে গাছে গাছে, পাতা আর ডালে ডালে।

পাখিটির নাম ‘অম্বর-চুটকি’। ইংরেজি নাম Verditer Flycatcher। তার দৈর্ঘ্য মাত্র ১৬ সেন্টিমিটার।    

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘চুটকিরা অধিকাংশই পরিযায়ী পাখি। অম্বর-চুটকিও তাই। শীতে পাহাড়ে উঠে যায়, হিমালয়ের ওপরে থাকে। এমনি কি ওরা তুন্দ্রা অথবা তাইগাতেও চলে যায়। উড়ে উড়ে ওরা দশ হাজার থেকে বিশ হাজার কিলোমিটার দূরেও চলে যেতে পারে’।
আকাশের দিকে চেয়ে অম্বর-চুটকি।  ছবি: আবু বকর সিদ্দিক‘অম্বর-চুটকি’ পাখিটিকে অন্য চুটকিদের তুলনায় খুব স্পষ্ট দেখা যায়। অম্বর-চুটকি খোলা জায়গাগুলোতে বসে। অন্য চুটকিগুলো গাছের ডালে ডালে লুকিয়ে বসে থাকে। শিকারি পাখি ওদের ধরে খেয়ে ফেলবে বলে তাদের এমন আত্মরক্ষা। অম্বর-চুটকি প্রকাশ্যে বসে। কারণ, ওরা উড়ন্ত পোকা ধরে ধরে খায়। আবার ডালে এসে বসে’।

ইনাম আল হক আরও বলেন, ‘ওরা খুব তীক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন পাখি। অন্য চুটকিদের চেয়ে ওরা সংখ্যায় বেশি এবং ভালোভাবেই আছে আমাদের দেশে। এটিও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় যে, অম্বর-চুটকিরা যে পোকা বা পোকাগুলো খাচ্ছে, সেগুলো হয়তো কীটনাশকে কম আক্রান্ত হচ্ছে। কীটনাশক সব পোকা-মাড়ককে সমানভাবে ক্ষতি করে না। এগুলো সবই ‘হয়তো’ দিয়েই বলতে হবে। তবে অন্য চুটকিগুলো কিন্তু ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে’।
 
তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত খুশি যে, এই অম্বর-চুটকি পাখিটি আমাদের দেশে বেশ ভালোই আছে। এটিকে শীতের শুরুতেই দেখা যায়। এরা বাংলাদেশ থেকেও দক্ষিণে চলে যায়। এখানে যে ওরা পুরো শীতটা কাটায়, তাও নয়। অনেকে আরো দক্ষিণে অর্থাৎ থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনেও চলে যায়। আর উত্তরে ভারতের পাহাড়ি অঞ্চল বা হিমালয়, ভূটান বা নেপালেও দেখা যায় এই অম্বর-চুটকিদের। তারা বাসা করছে আরণ্যক পরিবেশে’।

‘ওরা পাহাড়ি গাছের ডালে বাসা বাঁধে। গ্রীষ্মে ওরা উত্তরের দিকে চলে যেতে থাকে। যেখানে খুব বেশি গরম নয় এবং বৃষ্টিও বেশি নয়, এমন জায়গায়। এ পোকাগুলোই হয়তো ওরা ওখানে খুঁজে পায়– যে পোকাগুলো ওরা খেয়ে থাকে’।
    
প্রথম ছবিটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এবং দ্বিতীয় ছবিটি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে তুলেছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন পাখি ও বন্যপ্রাণি আলোকচিত্রী আবু বকর সিদ্দিক।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৬ ঘন্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৭
বিবিবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।