শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ভোর পৌনে চারটা। চট্টগ্রাম, সিলেট, উত্তরবঙ্গের নাইট কোচগুলো একের পর এক এসে থামছে এখানে।
যাত্রীরা নামছেন ঝুম ঝুম বৃষ্টির মধ্যে। দৌড়ে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন চৌধুরী পেট্রোল পাম্প চত্ত্বরের তখনও খোলা কয়েকটি চায়ের দোকানে। ততোক্ষণে কারোরই কম-বেশি ভিজতে বাকি নেই। এর মাঝেও কে কোথায় যাবেন, সে আলাপ সেরে নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠেছেন। যারা শহরের বাইরে ও দূরে যাবেন, হাল্কা চা-নাস্তা খেয়ে নিচ্ছেন তারা।
রিকশা-অটোরিকশাগুলো এখনও রাস্তায় নামেনি। ফজরের আজান হলে আসবে। এখন অপেক্ষা ছাড়া উপায়ও নেই!
‘বাড়ি যেতে যেতে মনে হয় পুরোটাই ভিজে যাবো’- ঘুম লাগা চোখে-মুখে কথাগুলো বললেন সিরাজউদ্দিন। এসেছেন সিলেট থেকে, যাবেন পূর্বাঞ্চলের করিমগঞ্জ উপজেলায়।
‘মনে হচ্ছে এই বৃষ্টি শীত নামাবে’- সায় দিলেন আলতাফ হোসেন। এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে, যাবেন পাকুন্দিয়ায়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আজানের ধ্বনি। কিন্তু ভোর ভোর কোনো ভাব নেই চারপাশে। তখনও গুমোট অন্ধকার আকাশ আর অবিরাম বৃষ্টি। সামনের রাস্তা দিয়ে পানি ছিটিয়ে চলে যাচ্ছে বাস-ট্রাক।
অন্যদিন এ সময়টাতেই জেগে উঠতে থাকে শহর। আজ ব্যতিক্রম, বৃষ্টির শীতল পরশে ঘুমে ঢলে আছে শহর ও শহরবাসী। ছাতা মাথায় এক-দু’জন মুসুল্লি ছাড়া প্রাতঃভ্রমণের মানুষজনেরাও বিশ্রামে। বৃষ্টিতে আদিভৌতিক হয়ে আছে পুরো পরিবেশ।
‘মাইঝ রাইতে ধুম বিষ্টি শুরু হইছে। কুন সময় থামবো আল্লাহ জানেন! বিষ্টি আর বাতাসে জার (শীত) করতাছে’- শহরের দিকে আসতে আসতে বলছিলেন তরুণ রিকশাচালক সুমন মিয়া।
সাগরের নিম্নচাপজনিত আবহাওয়ায় সারা দেশেই কম-বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। অবিশ্রান্ত ধারার বর্ষণে মৃদু গরম ও গুমোট ভাবটি একেবারেই উবে গেছে। শীতল হাওয়ামাখা ভোর জানান দিচ্ছে, শীত আসতে আর দেরি নেই।
বৃষ্টির হাত ধরেই শীতের স্পর্শ যে গ্রাম-গঞ্জ-নগরে এসে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সামনের দিনগুলোতে হাড়কাঁপানো শীত আসার আগে আগে হালকা ঠাণ্ডাও জানান দিতে থাকবে প্রকৃতি ও পরিবেশে।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শহরের কাঁচারি বাজারও থমথম করছে। অন্য ছুটির দিনের এ সময়টাতে জমজমাট বাজারটি উপচে পড়ে মানুষের ভিড়ে। বৃষ্টির জন্য আজ লোকজনের দেখা নেই। নেহাৎ জরুরি না হলে বাসার বাইরেও বের হচ্ছেন না কেউ।
‘বিষ্টি বেশি দিন হইলে খবর আছে’- ধারণা তরি-তরকারির দোকানি আবদুস সোবহানের।
তার মতে, বেশি দিন বৃষ্টি হলে মাঠের ফসলের ক্ষতি হবে। জলাবদ্ধতায় ধান, পাট ও অন্যান্য শাক-সবজিতে পচন ধরতে পারে। গ্রামের দিকে মাঠে মাঠে এখন যে ফসলের সমারোহ, অতিবৃষ্টি ক্ষতি করতে পারে সেগুলোরও।
ভর দুপুরেও নিভু নিভু আলোয় খাঁ খাঁ করছে শহরের প্রধান সড়কের গৌরাঙ্গ বাজার। একজন দু’জন ছাতা মাথায় হেঁটে চলেছেন জরুরি কাজে। বৃষ্টির তোড় থেকে বাঁচতে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন দোকানের বারান্দায়।
তবে জনসমাগম কম বলে অধিকাংশ দোকানই বন্ধ। যে কয়েকটি খুলেছে, সেগুলোতে দিনের বেলায়ও কাজ-কর্ম চলছে বাতি জ্বালিয়ে।
শুক্রবার দিনভরই চলছে ভারী ও মাঝারি বৃষ্টি। সন্ধ্যার আগেই তাই পুরো প্রকৃতিতে গভীর রাতের চিহ্ন। সমস্ত আকাশ কালো হয়ে এসেছে এলোমেলো ভাসমান ঘন মেঘে। চলছে বৃষ্টি-বাতাসও।
আবহাওয়ার খবরে অন্তত শনিবারের (২১ অক্টোবর) আগে বৃষ্টি থামার কোনো তথ্য নেই। গরম ও গুমোট ভাব কাটাতে বৃষ্টির এই শীতল ছোঁয়ার দরকার আছে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হলে কৃষিজাত ফসলের ক্ষতির দুশ্চিন্তা ভাজ ফেলেছে মানুষের মুখে।
স্বস্তি ও শঙ্কার মাঝ দিয়ে এভাবেই কাটছে ঘোরতর এ বৃষ্টিস্নাত দিনটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
এমপি/এএসআর