এবছর মাঘের শেষ সপ্তাহেই টের পাওয়া গেছে ফাগুনের চপলতা। না বলেই শীত উধাও হয়েছে বসন্তের মাতাল আবেশে।
আনন্দিত সুর ও গানের কল্লোলিত ঝরণাধারায় ডেকেছে পাখির দল। কখন জানি না, একগুচ্ছ ঝরা পালকের বেদনা রেখে উড়ে গেছে সাইবেরিয়ার অতিথি পাখির ঝাঁক। দোসর হারানোর ব্যথাভরা বুকে চলে গেছে তারা স্বদেশে। আবার ফিরে আসার প্রত্যাশায় অতিথি পাখিরা সঙ্গে করে নিয়ে গেছে বাংলাদেশের জল টলোমলো সবুজাভ বসন্তের স্মৃতি।
শীত থেকে বসন্ত ঋতুতে প্রকৃতির রূপান্তর মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকেও প্রবল বদলে দিয়েছে। গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে বাসন্তী নান্দনিকতা; আলতো পরশ বুলিয়ে দিয়েছে দিন-যাপনের যাবতীয় অনুষঙ্গে। বইমেলায়, ক্যাম্পাসে-ক্যাম্পাসে, নাগরিক আড্ডায়, যূথবদ্ধ পথচলায়, যুগলের পদক্ষেপে, রুচি ও পোশাকে এসে গেছে বসন্ত। ঋতুরাজকে আবাহন করতে জীবন ও যৌবন তারুণ্যের লেলিহান শিখায় জেগে উঠেছে ফাগুনের গানে গানে, ফলে ফলে, রঙে ও গন্ধে।
আটপৌরে নগর-যান্ত্রিকতায় বর্ষা এবং বসন্তের মতো আর কোনও ঋতু সম্ভবত এতোটা শিহরণ জাগাতে পারে না। নগরের চৌকাঠে বর্ষা দৃশ্যত হয়ে যায় কষ্টের বারিধারা। বসন্তই সম্ভবত এখনও পারে বর্ণিলতায় ভরিয়ে দিতে। রঙে, গন্ধে, আলোয়, মলয়ে অসীমান্তিক নৈসর্গিকতায় ভাসিয়ে দিতে পারে জীবনের সীমাবদ্ধতাকে। জীবনের সীমাবদ্ধ বৃত্তকে পরিণত করতে পারে প্রসারিত ভূগোলে।
প্রকৃতির মতোই মানুষও প্রাণ খুলে, মন মেলে অপেক্ষায় থাকে ফাগুনের, বসন্তের। জীবনের সুবিস্তৃত জানালাগুলো বসন্তের বহুবর্ণা ক্যানভাসে একের পর এক খুলে যেতে থাকে। মুছে যায় আবিলতা। উন্মুক্ত হয় প্রতিটি হৃদয়। আনন্দ-উচ্ছ্বল ভালোবাসায় জাগে দিবস, জাগে রজনী, জাগে প্রাণ। শীত থেকে বসন্তে উত্তরণের মাহেন্দ্রক্ষণে নজরুলের কণ্ঠে পুরো বাংলাদেশ গাইতে থাকে: ‘বসন্ত এলো এলো এলো রে/পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহরে/মুহু মুহু কুহু তানে/মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে/ভ্রমর গুঞ্জে গুঞ্জে গুনগুন গানে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
এমপি/ জেএম