আরো দু-তিন প্রজাতির হাঁস ছিল ওই হাঁসেদের ভিড়ে। কিন্তু চোখ সহজে গিয়ে পড়ে যায় সবচেয়ে বড় হাঁসটির দিকে।
পাখি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে দূরবীক্ষণযন্ত্রে চোখ রাখতেই এই বড় আকৃতির হাঁসটি দৃষ্টিসীমায় প্রবেশ করে। নিমিষেই জন্ম দেয় দারুণ এক ভালোলাগার। ‘চুক-চুক, চুক-চুক’ করে কাদায় মুখ গুঁজে খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছিল সে।
পাখি পর্যবেক্ষক সাঈদ বিন জামাল বাংলানিউজকে বলেন, হাঁসটি আকারে গৃহপালিত রাজহাঁসের মতো। একে ‘ধূসর রাজহাঁস’ও বলা হয়। এর ইংরেজি নাম Greylag Goose এবং বৈজ্ঞানিক নাম Anser anser। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
এর আকৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেটে রাজহাঁসের আকৃতি সাধারণত ৭৫ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার হয়। মাথা ও গলা হালকা ছাই রঙের। দেহতল ধূসর এবং তলপেট সাদা। ধূসর বর্ণের পেটের মধ্যে কালো কালো দাগ রয়েছে। উড়ে যাওয়ার সময় তাদের সামনের দিকে ফ্যাকাসে দেখা যায়।
খাদ্য ও প্রাপ্তিস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাওর-বিল ও উপকূলীয় ঘাস, জলজ আগাছা, ভাসমান উদ্ভিদ, শামুক প্রভৃতি এদের খাদ্য। শীতে সিলেট ও ঢাকা বিভাগের বড় বিল, জলাশয় এবং চট্টগ্রাম ও বরিশালের উপকূলীয় অঞ্চলে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ বিরল। যদিও এখনো বিপন্নতার তালিকায় আসেনি।
জীববৈচিত্র্য গবেষণা ও সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘আইইউসিএন’ এর তালিকায় এ প্রজাতিগুলোকে বাংলাদেশে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান সাঈদ বিন জামাল।
বন্যপ্রাণী গবেষক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যাপক আ ন ম আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ধূসর রাজহাঁস মূলত শীতপ্রধান দেশ আইসল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, পোল্যান্ড, রাশিয়া (সাইবেরিয়া) এবং মধ্য এশিয়া প্রভৃতি দেশের বাসিন্দা। শীতকালে চট্টগ্রাম ও বলিশাল বিভাগের বিভিন্ন চরাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় এবং সিলেট বিভাগের হাওর-বিলে দেখা মেলে। হঠাৎ হঠাৎ ঢাকা বিভাগের কোলো কোনো জলাশয়ে এদের দেখা যায়।
অন্যসব হাঁসেদের মতো এরাও পানির নিচে ঠোঁট-মুখ গুঁজে খাদ্য অনুসন্ধান করে। এ হাঁসগুলো মূলত দিনে খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। তবে ভরা পূর্ণিমায় এদের সক্রিয় থাকতেও দেখা যায় বলে জানান বন্যপ্রাণী বিষয়ক লেখক, অধ্যাপক আ ন ম আমিনুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৮
বিবিবি/এএ