জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। কিন্তু প্রভাবশালীদের বন দখল, অবাধে বৃক্ষনিধন, বনের ভেতর রেল-সড়ক পথ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই উদ্যানের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
জানা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এরমধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এ বনে আছে। এছাড়া নানা প্রজাতির জীবজন্তু থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। কিন্তু সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে এই জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি এই বনে বৃদ্ধি পেয়েছে গাছ চুরি। সদ্য বিদায়ী সিলেট বিভাগীয় সহকারী বন কর্মকর্তা তবিবুর রহমানের তৎপরতার কারণে বিগত সময়ে গাছ পাচার বন্ধ থাকলেও গত দেড় মাসে তিনটি বৃহদাকার সেগুন গাছ ও কয়েকটি আগর গাছ পাচারের ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে ১৩ মে গাছ চোরদের সঙ্গে স্থানীয় আদিবাসীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে, লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরীণ সড়ক ও রেলপথের কারণে উদ্যানটি প্রাণীকূলের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়তই দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কায় কিংবা চাকায় পিষ্ট হয়ে কোনো না কোনো বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে। ফলে লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরে অবস্থিত সড়ক ও রেলপথসমূহ বন্যপ্রাণীকূলের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে, লাউয়াছড়া উদ্যানের আশপাশে ইকো ট্যুরিজমের নামে বনজঙ্গল ও মাটি কেটে কটেজ নির্মাণ, বাগান করার নামে লাউয়াছড়ার জায়গা দখল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের ফলে উদ্যানের পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সৈয়দ মহসীন পারভেজ বাংলানিউজকে বলেন, বন্যপ্রাণীগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ। এদের নির্ভয়তা, সুস্থতা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের। যেভাবে পরিবশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে তাতে করে প্রাণীকূলের ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে লাউয়াছড়াকে রক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক আ.স.ম সালেহ সুহেল বাংলানিউজকে জানান, লাউয়াছড়াকে রক্ষা করতে আমরা বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্টদের কাছে একাধিক দাবি জানিয়ে আসছি। এই উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত রেল ও সড়ক পথের বিকল্প ব্যবস্থা না করলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ট্রেন ও গাড়ির নিচে পিষ্ঠ হয়ে অর্ধেকের বেশি প্রাণী মারা যাবে। এই উদ্যানকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এ.এম শামসুল মোহিত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বন বিভাগে লোকবল কম থাকায় আমাদের কাজে অসুবিধা হচ্ছে। জীববৈচিত্র্যের কথা চিন্তা করে আমরা লাউয়াছড়ার মধ্যে অবস্থিত সড়কের জন্য বিকল্প চিন্তা করছি। এছাড়া নিয়ন্ত্রিত ট্যুরিজমের ব্যবস্থা নির্ধারণ করার কথাও ভাবছি। লাউয়াছড়াকে রক্ষা করতে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২১ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮
এনটি