ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

‘ওরা আমার শরীরের গন্ধ চেনে, তাই বন থেকে ছুটে আসে’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯
‘ওরা আমার শরীরের গন্ধ চেনে, তাই বন থেকে ছুটে আসে’ তিনটি বন্যপ্রাণীকে খাবার দিচ্ছেন তানিয়া। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: এখন আর নাম ধরে ডাকতে হয় না। তাকে দেখলেই তারা ছুটে আসে। মমতার পরশ নিতে চায়। যেভাবে মায়ের পাশে থাকে সন্তানেরা। একজন মা যেভাবে তার প্রিয় সন্তানদের ছেড়ে থাকতে পারেন না; তেমনি। 

দুটো বনবিড়াল আর একটি মেছোবাঘের ছানাকে পরম মমতায় কিছুদিন লালন-পালন করেছিলেন বন্যপ্রাণী গবেষক তানিয়া খান। সেবাশুশ্রুষা করতে করতে তাদের নিজের সন্তানের মতোই ভালোবেসে ফেলেন তিনি।

তবু সে মায়া ত্যাগ করতে হয় একদিন। প্রাণীগুলোর প্রাকৃতিক জীবনের কথা ভেবে তাদের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়ায় অবমুক্ত করেন। এখানেই দায়িত্ব শেষ করেননি তানিয়া। লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত হওয়ার পরেও নিয়মিতভাবে দেখতে যান তাদের। তার উপস্থিতি টের পেলেই তারা বিশেষ করে বনবিড়াল ছানা দুটো ছুটে আসে।  

ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা পাখি ও বন্যপ্রাণী সেবাকেন্দ্র ‘সোল’ (সেভ আওয়ার আনপ্রোটেক্টেড লাইফ) সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার ভাসানিগাঁওয়ের একটি সবজিক্ষেত থেকে গত ৬ ডিসেম্বর বনবিড়ালের চারটি ছানা ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সরকার বাজারের একটি কনফেকশনারি থেকে গত ১ জানুয়ারি একটি মেছো বাঘের ছানা উদ্ধার করে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। এ পাঁচটি ছানাকে সোল’র পরিচালক তানিয়া খানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বনবিড়ালের বাচ্চাগুলো খুব ছোট হওয়ায় এর মধ্যে দু’টি বাচ্চা মারা যায়। বন্যপ্রাণীদের খাবার দিচ্ছেন তানিয়া।  ছবি : বাংলানিউজবন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্র জানায়, ওই তিনটি বন্যপ্রাণীকে ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বনবিভাগের বন্যপ্রাণী রেসকিউ সেন্টারে এবং পরে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু তাদের মায়া এখনো কাটাতে পারেননি তানিয়া। প্রায়ই তিনি লাউয়াছড়ার জানকিছড়ায় তাদের দেখতে আসেন। দিনে না পেলে রাতে যান। তার উপস্থিতি টের পেলে বনবিড়ালের ছানাগুলো জঙ্গল থেকে হঠাৎ বের হয়ে তার দিকে ছুটে আসে।  

‘সোল’ এর পরিচালক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক তানিয়া খান বাংলানিউজকে বলেন, মেছোবাঘটিকে প্রায় একমাস এবং দু’টি বনবিড়ালকে দু’মাস নিজের সন্তানের মতোই প্রায় লালন-পালন করেছি। প্রায়ই আমি মৌলভীবাজার থেকে লাউয়াছড়ায় এসে তাদের ডাক দিলেই ওরা ছুটে আসতো। এখন আর ডাক দিতে হয় না। আমি যাওয়া মাত্রই ওরা ছুটে আসে। কীভাবে যেন ওরা টের পেয়ে যায়। আমার শরীরের ঘ্রাণ ওদের চেনা হয়ে গেছে। কিন্তু ফরেস্টের লোকজন নাম ধরে ডাকলেও ওরা আসে না। তানিয়ার মাতৃসেবায় লালিত তিন বন্যপ্রাণী।  ছবি : বাংলানিউজ
‘সারভাইভ’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আশার কথা হচ্ছে- ওরা ধীরে ধীরে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে পরিচিত হয়ে উঠছে এবং খাপ খাওয়াতে শিখছে। মেছোবিড়ালটাকে এ নিয়ে আমি দু’দিন দেখেছি। সেদিন রাতে আমি এসে দেখলাম সে ‘গার্ডেন লিজার্ট’ (রক্তচোষা বা গিরগিটি) নিজ থেকে ধরে খাচ্ছে। তার মানে ও টিকে যাচ্ছে প্রকৃতিতে। আর দুটো বনবিড়ালকে মাঝে মধ্যে খাবার দিয়ে আসি; তারপরও ওরা বন থেকে খাবার সংগ্রহ করে খেতে শিখে গেছে। আমার বাসায় কম্বলের নিচে ছিল ওরা খুব ভালো ছিল; এখন দুটো বনবিড়ালের কানের মাঝে ‘আঠালি’ (রক্তচোষা ক্ষুদ্র কীট) দেখেছি।  
‘আমি এর আগেও অনেক বন্যপ্রাণীকে কিছুদিন সেবাশুশ্রুষা করে শারীরিকভাবে সুস্থ করে তুলে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছি। ওইসব বন্যপ্রাণীদের রেসকিউ করার পর কখনো এভাবে বারবার দেখতে আসিনি। কিন্তু এই তিনটি প্রাণীর কথা ভিন্ন। ’ 
‘এই তিনটি ছানার প্রতি বারবার গভীর টান অনুভব করি। কারণ আমি তাদের খুব ছোট থেকে বড় করে তুলেছি। তাছাড়া ওরা প্রকৃতিতে সারভাইভ করতে পারছে কিনা তাও দেখছি। তাই প্রতিনিয়ত আমি মনিটর করছি; আরো কিছুদিন করবো। জানান ‘সোল’ এর পরিচালক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক তানিয়া।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।