বুনো শূকরের ইংরেজি নাম Wild Boar এবং বৈজ্ঞানিক নাম Sus scrofa। দৈর্ঘ্য ১৩৫ সেমি, লেজ ২৫ সেমি।
বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ও গবেষক আদনান আজাদ আসিফ বাংলানিউজকে বলেন, বুনো শূকর বনের খুবই উপকারী প্রাণী। এরা প্রতিবেশ ব্যবস্থায় বনের ভালো অবস্থান তৈরি করতে সাহায্য করে। এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এমনিতে শূকরগুলো খুব বদমেজাজি এবং একগুঁয়ে। দৌড়াতে খুবই পারদর্শী।
‘রাতে ফরেস্টের মধ্যে গবেষণার কাজ করতে গিয়ে আমি কয়েকবার তাদের তাড়াও খেয়েছি। এরা দলবদ্ধভাবে থাকতে খুব পছন্দ করে। সর্বভুক প্রাণী। ফল, মূল, লতা, পাতা, গাছের শিকড় থেকে শুরু করে উঁইপোকার ঢিবি, পিঁপড়ের ঢিবি, পাখি, পাখির বাচ্চা, ডিম বিভিন্ন প্রাণীর মাংস অর্থাৎ, খাবার তালিকায় কোনো কিছু বাদ নেই। আমাদের ফরেস্টগুলোতে বার্ধক্যজনিত কারণে যে বন্যপ্রাণীগুলো মারা যায় তাদের মাংসও শূকর খায়।
তিনি আরও বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের দোকানগুলোর আশপাশে বুনো শূকররা নেমে আসে। তবে লাউয়াছড়ার শূকরা মানুষ দেখতে দেখতে কিছুটা সভ্য হয়ে উঠেছে।
এদের প্রাপ্তি সম্পর্কে গবেষক আদনান বলেন, বুনো শূকররা রাতে বনের আশপাশে মানুষের ফসলি জমিতে দলগতভাবে হানা দেয়। এজন্য বন সংলগ্ন নৃ-জনগোষ্ঠীর তাদের জমিতে বুনো শূকর নেমে আসলেই আক্রমণ চালায়। নৃ-জনগোষ্ঠীর প্রিয় খাবার হচ্ছে শূকরের মাংস। এজন্য বুনো শূকরের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। দেশের চিরসবুজ প্রাকৃতিক বন ও সুন্দরবন ছাড়া আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
বেশির ভাগ সময় অন্য কোনো প্রাণীর শিকার করা খাবারই খায়। বাঘ কোনো প্রাণীকে শিকার করার পর মুখ দিয়ে টেনে নিয়ে যায় এবং তার শিকারটি লুকিয়ে রাখে। বুনো শূকররা এসে সেই শিকার করা পশুর চামড়া ছিঁড়ে খেতে শুরু করে। অল্প কিছুক্ষণ পর বাঘ এসে তাদের বিদায় করে নিজের শিকারটি খায়।
এভাবে বাঘ তার প্রয়োজনে বুনো শূকরকে ব্যবহার করে বলে জানান আদনান।
লাউয়াছড়ার বিট অফিসার আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের সন্ধানে বুনো শূকর দলবেঁধে আসে। ছোট থেকে বড় সব বয়সীদের সমন্বয়ে গঠিত তাদের এই দল। এ দলের সবচেয়ে বড় বুনো শূকরটি সাধারণত দলনেতা। তার নেতৃত্বেই তাদের দলগত এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা আসে।
যদিও তারা সর্বভূক প্রাণী। তারপরও কোনো কারণে যখন বনে তাদের খাবার সংকট পড়ে যায় তখন তারা তাদের শক্তিশালী নাক দিয়ে মাটি খুঁড়ে গাছের পচা শিকড় খায়। এরা ক্ষেপে গেলে বা ভয় পেলে ‘গুঁতত, গুঁতত’ শব্দ করে বলে জানান আদনান আজাদ আসিফ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৯
বিবিবি/এএ