ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

চিড়িয়াখানায় নজর কাড়ছে দ্রুতগতির চিতা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৯
চিড়িয়াখানায় নজর কাড়ছে দ্রুতগতির চিতা

ঢাকা: জাতীয় চিড়িয়াখানার সি-০৯ খাঁচার সামনে অগুনতি দর্শনার্থী। খাঁচার পাশ থেকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবাই। কাছে গিয়ে দেখা গেলো ভেতরে রেয়েছে একজোড়া চিতা। অনেকে এতদিন ডিসকভারি চ্যানেলে দ্রুত গতির চিতা দেখেছেন। সেই চিতা এখন দেখা যাচ্ছে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। 

১৯৭৪ সালে স্বল্প পরিসরে পথচলা শুরু করে জাতীয় চিড়িয়াখানা। কিন্তু কখনও চিতা আসেনি এই চিড়িয়াখানায়।

চলতি বছরের ৩ আগস্ট দ্রুতগতির চিতা আনা হয় চিড়িয়াখানায়। এতে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে চিড়িয়াখানা। দর্শনার্থীরাও আগ্রহ নিয়ে দেখছেন চিতাগুলো।

ঢাকার মধুবাগ থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানায় এসেছেন সাহিনুল ইসলাম ও মেরিনা ইসলাম দম্পতি। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন চার বছরের শিশু সাফিন ইসলামকে। মূলত সাহিনুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। যশোর মনিরামপুরে ব্যবসা করেন। মুধবাগে বড় ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে এসে ঢুঁ মেরে গেলেন চিড়িয়াখানায়।
 
সাহিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, চিড়িয়াখানায় একা একা একাধিক বার এসেছি। তবে এবারই প্রথম পরিবার নিয়ে আসলাম। চিড়িয়াখানায় এসে দ্রুতগতির চিতা দেখতে পাবো ভাবিনি। এটা বাড়তি আনন্দ মনে করতে পারেন। আমার মনে হয় আরও বেশি প্রাণী চিড়িয়াখানায় আনা দরকার।  
চিতা।  ছবি: বাংলানিউজচিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এবারই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছে দ্রুতগতির চিতা। পুরুষ ও নারী চিতা জোড়া রাখা হয়েছে সি-০৯ শেডে। চিতা জোড়া এখন চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণ। তাদের বয়স আড়াই বছর। চলতি মাসের তিন তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এদের কেনা হয়েছে ৬০ লাখ টাকায়। এদের মাধ্যমে চিতার সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে চিতা জোড়া এখনও প্রাপ্তবয়স্ক নয়। প্রাপ্তবয়স্ক হতে আরও ৬ মাস সময় লাগবে।

এ প্রসঙ্গে মিরপুর চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাজমুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে কয়েক দিন তাপমাত্রায় সমস্যা হচ্ছিল চিতা দু’টির। এরা দক্ষিণ আফ্রিকার ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থেকে বাংলাদেশে ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রা প্রবেশ করে। তবে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের তাপমাত্রা মানিয়ে নিয়েছে এরা। এখন এদের গরুর মাংসের পাশাপাশি মুরগিও খেতে দেওয়া হচ্ছে।
 
‘এর আগে চিড়িয়াখানায় চিতাবাঘ আনা হয়েছিল। চিতাবাঘ সাধারণত ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে দৌঁড়াতে পারে। তবে চিতা ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে দৌঁড়াতে পারে। চিতা জোড়া আসায় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের মধ্যে ভিন্ন আনন্দের মাত্রা যোগ হয়েছে। এটাই বিশ্বে সব থেকে দ্রতগতির প্রাণী। ’

চিতা বিড়াল গোষ্ঠীর প্রাণী। এটি দেখতে অনেকটা লেপার্ডের মতো। তবে আকৃতিতে ছোট। গতিতে দৌঁড়ানোর সময় এর শরীর ঘুরে যায় না বা নিয়ন্ত্রণ হারায় না লেজের কারণে। দ্রুত দৌঁড়াতে পারলেও চিতা খুব বেশিক্ষণ ছুটতে পারে না। সর্বোচ্চ গতিতে এটি প্রায় ৩০ সেকেন্ড এর মত দৌঁড়াতে পারে। এরপর এর শরীর এতটাই গরম এবং ক্লান্ত হয়ে যায় যে, এটিকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে হয় আগের অবস্থায় ফিরে আসার জন্য।  

চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা খরচ করে মোট ১১টি নতুন প্রাণী কেনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চারটি বাঘ, এক জোড়া চিতা, দু’টি হরিণ গোত্রীয় ইম্পালা ও তিনটি ক্যাঙ্গারু। এর মধ্যে চারটি বাঘ আনতে খরচ হয়েছে ৮০ লাখ টাকা, এক জোড়া চিতা ৬০ লাখ, তিনটি ক্যাঙ্গারু ৩৩ লাখ ও এক জোড়া ইম্পালা আট লাখ টাকা। চিড়িয়াখানার নতুন এ অতিথিদের রাখা হয়েছে নতুন শেডে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৯
এমআইএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।