বেজির বৈজ্ঞানিক নাম ‘Herpestes auropunctatus’। ইংরেজি নাম ‘Small Indian Mongoose’।
বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বেজির বসবাস। বড় বেজি, ছোট বেজি এবং কাঁকড়াভুক বেজি। কাঁকড়াভুক বেজি বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখা যায়। বড় বেজি দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। তবে দেশের মধ্যাঞ্চলেও এদের দেখা পাওয়া যায়। ছোট বেজি সারাদেশেই কমবেশি বসবাস করতে দেখা যায়।
বেজি ফসলের খেতের ছোট-বড় ইঁদুর, সাপ, মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়, পাখি এমনকি পাখির ডিম খায়। মাঝে মধ্যে এরা হাঁস-মুরগি, কবুতরের ছানা এবং অন্যান্য ছোট প্রাণীও খায়। তাই গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বেজিকে শত্রু মনে করে। তবে দুয়েকটা হাঁস মুরগির ছানা খেয়ে বেজি কৃষকের যে ক্ষতি করে, তার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে ফসলের খেতের ইঁদুর ও পোকামাকড় খেয়ে। এছাড়াও বেজি যে অঞ্চলে থাকে, সে অঞ্চলে সাপ থাকে না। বিষধর সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড় এবং বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ খেয়ে বেজি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অসামান্য অবদান রাখে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খান বাংলানিউজকে বেজি প্রসঙ্গে বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে ছোট বেজি এবং বড় বেজি এখনও মোটামুটি ভালোই আছে। কাঁকড়াভুক বেজি অনেক কম দেখা যায়। তবে সব বেজিই আগের চেয়ে কমে গেছে।
বেজির গায়ের রঙ ধূসর-বাদামি। এরা সাধারণত চার পায়ে চলাফেরা করে। গাছে চড়তেও পারদর্শী। কখনও কখনও দুই পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেজি দেখতেও বেশ অদ্ভুত লাগে। এদের পা বেশ খাটো এবং কান ছোট। বিপদের আভাস পেলে নিঃশব্দে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
বেজি সম্পর্কে আমাদের দেশে একটা ভুল ধারণা আছে যে, সাপের কামড়ে বেজির কোনো ক্ষতি হয় না। বেজির কাছে না-কি সাপের বিষের ওষুধ আছে, অনেকেই এমনটা ভাবে। তাই সাপ কামড় দিলে বেজির কিছুই হয় না। এটা একটা ভুল ধারণা। বেজির লোম অনেক মোটা। এরা উত্তেজিত হলে এই লোম বেশি ফোলে যায়। তাই সাপের কামড় বেজির শরীরে ভালো করে লাগতে পারে না। যে কারণে সাপের কামড়ে বেজির তেমন ক্ষতি হয় না।
প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেসের (আইইউসিএনএন) বন্যপ্রাণী গবেষক সীমান্ত দীপু বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ এবং বৈশ্বিকভাবে বন্যপ্রাণীর যে রেড লিস্ট আছে, সে ক্যাটাগরিতে বেজির নাম নেই। তবে সারাদেশেই বেজির অবস্থা খারাপ। আগের তুলনায় শহর এবং গ্রামে বেজি কমে গেছে উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞ নুরজাহান সরকার বাংলানিউজকে বলেন, বেজি মানুষ এবং প্রকৃতির পরম উপকারী একটা প্রাণী। বেজি ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষায় বড় ভূমিকা পালন করে। সেইসঙ্গে বেজি সাপ খেয়ে সাপের বৃদ্ধি রোধ করতেও বিশেষ অবদান রাখে। কিন্তু নগরায়ণ, আবাস ও খাদ্য সংকটের কারণে বেজি দিনে দিনে কমে যাচ্ছে আমাদের প্রকৃতি থেকে। সেইসঙ্গে কিছু উপজাতিরাও বেজি ধরে খায়। বেজি সংরক্ষণে গণসচেতনতার গুরুত্ব অনেক বেশি বলে তিনি জানান।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেজির অবদান অনস্বীকার্য। প্রকৃতিতে এদের টিকে থাকা অত্যন্ত জরুরি এবং মানুষের প্রয়োজনেই বেজিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণ করা দরকার বলেই বিশেষজ্ঞরা মত দেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
আরএকেআর/টিএ