ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

শ্রীমঙ্গলে পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার, নীরব প্রশাসন

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৯
শ্রীমঙ্গলে পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার, নীরব প্রশাসন কমছে না পলিথিনের ব্যবহার। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: পর্যটননগরী ও চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে চলছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক এসব পলিথিনে খাদ্যসহ নানান পণ্য ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। ফলে থেকেই যাচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।  

দীর্ঘদিন ধরে শ্রীমঙ্গলের সর্বত্র পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার দেখা গেলেও প্রশাসনের কোনো নজর নেই এ ব্যাপারে। যে যার মতো পলিথিন ব্যবহার করে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে ঠেলে দিচ্ছেন ঝুঁকির দিকে।

 

শ্রীমঙ্গলের শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্ষতিকর প্লাস্টিকের বস্তায় দিনের পর দিন অপেক্ষাকৃত দেরিতে পচনশীল আলু মওজুদ করে রেখে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন থাকার ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০০২-তে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘সরকার নির্ধারিত পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণে প্রথম অপরাধের দায়ে অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২ (দুই) লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা অন্যূন ২ (দুই) লাখ টাকা, অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা। ’

আরও বলা আছে, ‘বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দায়ে অনধিক ১ (এক) বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ’

বন্ধ হয়নি পলিথিনের ব্যবহার।  ছবি: বাংলানিউজ

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. বিনেন্দু ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগে যখন গরম খাদ্যবস্তু রাখা হয়, তখন তা থেকে স্টাইরিন নামক একটি বিষাক্ত উপাদান রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যবস্তুতে মিশে যায়, যা কার্সিনোজেন হিসেবে কাজ করে এবং ক্যানসার ঘটায়। 'থ্যালেটস' ও 'বিসফেনল-এ' নামক আরও দু’টি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিষ্ক্রমণ করে যা ডায়বেটিসের জন্য দায়ী এবং হৃদরোগ ও লিভারেরও প্রভূত ক্ষতি করে।

তিনি আরও বলেন, একটি পলিথিন ব্যাগ পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে সময় নেয় ১৫ থেকে হাজার বছর। ফলে এটি বহুকাল ধরে ভূমির অনুর্বরতা হ্রাস করার জন্য তার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নিষ্ক্রমণ করে যেতে যেমন সক্ষম, তেমনি বছরের পর বছর অদ্রাব্য থেকে এটি ভূমি ও উদ্ভিদের মারাত্মক ক্ষতির কারণও হতে থাকে বহুকাল। এটি যখন নালা-নর্দমায় পড়ে, তখন এটি জটলা পাকিয়ে পয়ঃনিষ্কাশণের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এতে সঞ্চিত পানি এডিস বা অ্যানোফিলিশ মশার বংশবৃদ্ধির জন্য একটি উত্তম ক্ষেত্রে পরিণত হয় যার কুফল বাংলাদেশ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

পরিবেশবিদ তোফাজ্জল সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিসাধনকারী পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করে এর পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব দেশি পাটের ব্যাগ তৈরি এবং এর ব্যাপক প্রচলন নিশ্চিত করা হলে আমাদের দেশের কৃষকরা দারুণ লাভবান হবেন।

শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী পরিতোষ দেব বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বাজারগুলোতে দেদারসে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহার চলছে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিসিন কিনলেই ক্রেতাদের হাতে পলিথিন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, দিনের পর দিন ব্যবসায়ীরা এগুলোতে তরিতরকারিসহ মানুষের বিভিন্ন খাদ্য উপাদানগুলো রেখে দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাংলানিউজকে বলেন, ইতোপূর্বে এ ব্যাপারে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করেছি। আমাদের আইন-শৃংখলা বিষয়ক মাসিক সভায় বাজার সমিতির নেতাদের পলিথিন ব্যবহার না করার জন্য নির্দেশ দেই। এ ব্যাপারে আমরা আবারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৯
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।