ঢাকা, শনিবার, ২২ চৈত্র ১৪৩১, ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পাহাড়ি নদীর তীরে অপরূপ ‘কাশকন্যা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
পাহাড়ি নদীর তীরে অপরূপ ‘কাশকন্যা’

মৌলভীবাজার: শরৎরানী আগলে রয়েছে শ্বেতশুভ্র কাশেদের বুকে। অপূর্ব সৌন্দর্যে জানান দিচ্ছে তাদের এই ফুলে ফুলে ভরে ওঠার পূর্ণতা। তার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী। যেন ওরা একে অপরের!

নদী ছাড়া কাশেদের যেন একদম মানায় না। কাশেরাও নদীর সংস্পর্শ ছাড়া তাদের দারুণ সৌন্দর্য আর অহংকারটুকু জেগে ওঠে না।

নিসর্গপ্রকৃতির এই দু’টো জিনিসই যে অবিচ্ছেদ্য।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার এই পাহাড়ি নদীর নাম ভুরভুরিয়া। তবে এখন এই নদীটিকে ‘ভুরভুরিয়া ছড়া’ বানিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দায়ভার থেকে ধ্বংস করার জন্য চলছে নিরন্তর চেষ্টা। এতদিন ছিল স্থানীয় বালুখেকোদের থাবা। বর্তমানে প্রশাসনের নজরদারিতে তা এখন এখানে সাময়িকভাবে বন্ধ। সে বিবেচনায় নিসর্গপ্রেমীদের কৃতজ্ঞতা পেতেই পারেন স্থানীয় প্রশাসন। কারণ, এভাবেই যে রক্ষা হয়েছে নদী আর কাশবনের টিকে থাকা।  

চায়ের রাজধানী আর পর্যটননগরী শ্রীমঙ্গলের ভুরভুরিয়া নদীর পাশ ঘিরে মাথা উঁচু করে সম্মিলিতভাবে দোল খাচ্ছে শ্বেতশুভ্র কাশ। এর নয়নাভিরাম নজরকাড়া রূপের হাতছানি মানুষের মনকে নাড়া দিয়ে কাছে টেনে আনে। কাশবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে যেতে শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটকরা প্রতিদিনই ভিড় করছেন এখানে। শ্রীমঙ্গলে ভুরভরিয়া নদীর পাড়ের কাশবন।  ছবি: বাংলানিউজ

শ্রীমঙ্গলে ভুরভরিয়া নদীর পাড়ের কাশবন। ছবি: বাংলানিউজ

কেউ জানে না! এই জায়গাটি কবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘হটকেক’ (ভাইরাল) হয়ে গেছে। এখন তো দলে দলে ছুটে আসছে লোক। কাশেদের আজ একা থাকার দায় ঘুচলো। মানুষের মনে যে সৌন্দর্যপিপাষু ভ্রমণ মানসিকতাটুকু রয়েছে তার প্রকাশ ঘটেছে কেবল। এই কাশফুলের কাছাকাছিতে।

এখন কাশেদের একাকী পাওয়া যায় না! কোলাহলপূর্ণ হয়ে উঠছে এ নদীঘেষা জনপদ। টিলার এককোণে দাঁড়ালেই পাহাড়ি নদী আর বিরামহীন সৌন্দর্য। মুহূর্তে আকুল করে দু’চোখ। ভরিয়ে তোলে সমস্ত ভালো লাগার নীরব পর্যটকসাক্ষী হতে।

শহুরে জীবন থেকে এই কাশের রাজ্যে হঠাৎ এক বিকেলে ছুটে আসা মানুষরা যেন বাঁচার অক্সিজেনটুকু নিতে আসেন। কয়েকটি নিঃশ্বাসের বিশ্বাসে সেটুকু নিয়ে ফিরে যান নিজেদের গৃহে। কেমন প্রশান্তি এর? এর উত্তর জানালেন নন্দিনী তনু।   

‘শহুরে জীবনে মাঝে মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসে। একঘেয়েমি কাটানোর জন্য এমন প্রকৃতিতেই তো চিরশান্তি। সময় পেলেই চা বাগানে ছুটে আসা। এবার তো পাহাড়ি নদীতে কাশেদের মেলা। নদীর তীরে এমন কাশবন দেখতে খুবই সুন্দর। এই কাশফুলের শুভ্রতা মনকে শুদ্ধ করে। ’
কাশবন দেখতে আসা পর্যটকদের উপস্থিতি।  ছবি: বাংলানিউজ

কাশবন দেখতে আসা পর্যটকদের উপস্থিতি। ছবি: বাংলানিউজ

যোগ করে তিনি আরও বলেন, নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুলই তো জানান দেয় শরৎকাল এসে গেছে। কিছুদিন পরই ওরা ফুরিয়ে যাবে। আবার একটি বছরের অপেক্ষা।

ঘাসজাতীয় জলজ-উদ্ভিদ কাশ। পালকের মতো নরম সাদা সাদা এ ফুলগুলো। এর বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum spontaneum। প্রায় তিন মিটার অবধি সোজাসোজি খাড়া হয়ে থাকে ওরা। কাশফুলের গাছগুলো দিয়ে মাদুর, গ্রাম ও চা বাগানে ঘরের বেড়া, ঘরের চাল ছাওয়া হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
বিবিবি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।