কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামুর খুনিয়াপালংয়ের ধোয়াপালং এলাকায় লোকালয়ে এসে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে একটি মা হাতির মৃত্যু হয়েছে।
এ সময় হাতিটির শরীর থেকে মাথা ও পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে তিন বছরে ১৬ হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’।
ইউএনও প্রণয় চাকমা জানান, মঙ্গলবার ভোরে রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ধোয়াপালং এলাকায় ধানক্ষেতে চলে আসে একটি মা হাতি। সেখানে স্থানীয় মানুষের দেওয়া বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়। এরপর কিছু দুর্বৃত্ত শরীর থেকে হাতিটির মাথা ও পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও জানান ইউএনও।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নজির আহমেদ নামে একজনকে বনবিভাগ আটক করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এখনো বনবিভাগের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের বনাঞ্চলে মহাবিপন্ন এশিয়ান হাতিকে একের পর এক হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’। মহাবিপন্ন এশিয়ান হাতির মতো এই বন্যপ্রাণী রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার কক্সবাজারের রামুর খুনিয়াপালং এলাকায় হাতি হত্যা করে খণ্ড খণ্ড করে পুঁতে ফেলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংগঠনটি।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হয় যে, ফাঁদ পেতে, গুলি করে, বিদ্যুৎ শর্ট দিয়ে একের পর এক হাতি হত্যা করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না অপরাধীরা এখন হাতিকে হত্যা করে খণ্ড খণ্ড করে পুঁতে ফেলা হচ্ছে। এভাবে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে নির্মম আচরণ করলেও অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসছে না।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর কক্সবাজারের চকরিয়ার খুটাখালীর কালাপাড়ার বনাঞ্চলে একটি বাচ্চা হাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
৮ দিনের ব্যবধানে ১৪ নভেম্বর কক্সবাজারের রামুর জোয়ারিয়ানালার জুমছড়ির বনাঞ্চলে ৩০ বছর বয়সী স্ত্রী হাতিকে গুলি করা হয়। ওই হাতি ১৬ নভেম্বর মারা যায়।
এক দিনের ব্যবধানে ১৫ নভেম্বর কক্সবাজার রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির খরলিয়াছড়ায় বিদ্যুতের তার ও গুলি করে আরও একটি হাতিকে হত্যা করা হয়।
এছাড়া গত তিন বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের অঞ্চলে অন্তত ১৬টি হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গুলি এবং বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়েই বেশির ভাগ হাতির মৃত্যু হয়। এভাবে ধারাবাহিকভাবে হাতি হত্যার ঘটনা উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই পুরো দেশ থেকে এশিয়ান হাতি বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এশিয়ান হাতিকে মহাবিপন্ন উল্লেখ করে এনভায়রনমেন্ট পিপল’র প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ জানিয়েছেন, সারা দেশের ২৬৮টি মহাবিপন্ন এশিয়ান হাতির দুই তৃতীয়াংশের বসবাস কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। কিন্তু কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলে রেললাইন, রোহিঙ্গা বসতি, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, অবৈধ জবরদখলসহ বিভিন্ন কারণে এসব হাতির নিরাপদ আবাসস্থল, পর্যাপ্ত খাদ্য, নিরাপদ চলাচল (করিডর) চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর কারণে এসব হাতি লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। এতে হাতি ও মানুষের মধ্যে দ্বন্ধ তৈরি হচ্ছে।
এর মধ্যে অসাধু লোকজন হাতি ঠেকাতে নিষ্ঠুরভাবে গুলি ও বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করে হাতি হত্যায় মেতে উঠেছে। নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি, খাদ্য সংকট দূর করা, হাতি চলাচলের রাস্তা (করিডর) নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখা, হাতি হত্যায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা, মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, বনভূমি দখল রোধ, বনাঞ্চল তৈরিসহ মহাবিপন্ন এই এশিয়ান হাতি সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২১
এসবি/এএটি