টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মধুপুর বনের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে শালবনের সঙ্গে মানানসই দেশি প্রজাতির বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু করেছে বন বিভাগ। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণীর খাদ্যের সংস্থান, নিরাপদ আবাসস্থল টেকসই বনের জন্য বেত ও ভেষজ বৃক্ষের সমন্বয়ে বাগান করা হচ্ছে।
টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের এ বনায়ন কার্যক্রমে মধুপুর শালবনের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
বন বিভাগের দোখলা রেঞ্জ সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল বন বিভাগের মধুপুরের দোখলা রেঞ্জের অরণখোলা মৌজায় সুফল প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০ হেক্টর দেশি নানা প্রজাতির ফলদ ও ৫০ হেক্টর বেত বাগান করা হয়েছে। জবরদখল রোধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণীদের খাদ্যের সংস্থান, নিরাপদ আবাসস্থল বনের মধ্যে বেড়া হিসেবে বেত রোপণ ও ভেষজ গাছের সমন্বয়ে এ বাগান করা হয়েছে। বনের ঐতিহ্য ফিরাতে ও পশু খাদ্যের জন্য দেশি প্রজাতির লটকন, ঢেউয়া, জলপাই, গোলাপজাম, তিতিজাম, ঢাকিজাম, কালোজাম, আমলকি, কাঠবাদাম, তেঁতুল, চাপালিশ, বহেড়া, পেয়ারা, গাদিলা, নেওউর, গাব, আতাফল, জামরুল ও চালতাসহ নানা প্রজাতির ১০০ হেক্টর ফলের বাগান করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে সৃজিত বাগানে ফুল-ফল আসতে শুরু হয়েছে। ফুল ও ফলে বাগান সমৃদ্ধ হলে বন্যপ্রাণীদের খাদ্যের সংস্থান হবে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হবে। বন রক্ষার পাশাপাশি জবরদখল রোধ হয়ে ফিরে আসবে মধুপুর শালবনের হারানো ঐতিহ্য। এসব তথ্য বন বিভাগের দোখলা রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি সুফল প্রকল্পের এ বাগান টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. মো. আতাউল গনি, টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জহিরুল হক, মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা ইয়াসমীন বাগান পরিদর্শন করেন।
দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ বাংলানিউজকে বলেন, সুফল প্রকল্পের মাধ্যমে দোখলা রেঞ্জে ১০০ হেক্টর ফলদ ও ৫০ হেক্টর বেত বাগান সৃজন করা হয়েছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পশুখাদ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের জন্য দেশি প্রজাতির বহেড়া, আমলকি, কাঠবাদাম, জাম চালতাসহ আরও ২৫-৩০ প্রজাতির ফলদ বাগান করা হয়েছে। শালবনের জীবন্ত বেড়া হিসেবে বেত বাগান করা হয়েছে। বাগানে ফুল-ফল ধরা শুরু হয়েছে।
টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল বাড়ানোর জন্য যেসব গাছের ফল খায় ওইসব গাছকে গুরুত্ব দিয়ে সুফল প্রকল্পের আওতায় ১১ লাখ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।
ডিসি ড. মো. আতাউল গনি বাংলানিউজকে বলেন, বন বিভাগের উদ্যোগে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য গাছ লাগানোসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন বিভাগকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বানরসহ বেশ কিছু বন্যপ্রাণী খাদ্যের অভাবে ভুগছে, সেইসব প্রাণীর খাবারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। জেলার যেখানেই বন্যপ্রাণীর খাদ্যের অভাব দেখা দেবে, সেখানেই সহায়তা দেওয়া হবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা পেলে আমরা মানুষ বাঁচবো। আমরা সবাই প্রাকৃতিক পরিবেশে সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
এসআরএস