মৌলভীবাজার: প্রচুর পরিযায়ী পাখিতে মুখর বাইক্কা বিল এখন অনেকটাই পাখিশূন্য। নেই ব্যাপকভাবে তাদের কলকাকলি আর জলকেলির শব্দাবলি।
অন্যান্যা বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মোটামুটি পরিযায়ী পাখিরা আসা শুরু করতো। তাদের দূর পরিভ্রমণের ক্লান্তির বিশ্রামস্থল হয়ে উঠতো এই বাইক্কা বিল জলাভূমি। কিন্তু এবার অন্যরূপ। পরিযায়ীরা এখনও আসেনি।
সম্প্রতি বাইক্কা বিলে দেখা গেল, আবাসিক বেগুনি কালেম, পাতি সরালি, ছোট ডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি পাখিদের। এগুলো সবই বাইক্কা বিলের স্থায়ী অধিবাসী। কেউ কেউ দল বেঁধে মাথার ওপর দিয়ে এদিক থেকে অন্যদিকে উড়ে যাচ্ছে।
এদিকে শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর মাত্র ২ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলের। সেই দুটি দিবসে তাপমাত্রা ১৪ আর ১৫ এর ঘরেই অবস্থান করেছে। ফলে শীত ততটা অনুভূত হয়নি। তবে এ আবহাওয়া অফিস কর্মকর্তার ধারণা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শ্রীমঙ্গলে জেঁকে বসতে পারে শীত। বাইক্কা বিল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকা বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের (আরএমও) সাধারণ সম্পাদক মিন্নত আলী জানান, শীতে জেঁকে না বসলে বাইক্কা বিলে পাখিরা কখনোই আসেনি। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যখনই তীব্রভাবে শীত আমরা অনুভূব করেছি তখনই বাইক্কা বিলে পরিযায়ী পাখিদের ঝাঁক উড়ে উড়ে এসেছে।
বাইক্কা বিলের দায়িত্বে থাকা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজর (সিএনআরএস) কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বাইক্কা বিলে পাখি এখনও আসেনি। অন্যান্য বছরগুলোতে কিন্তু নভেম্বরের শুরুতেই পাখি আসা শুরু হয়ে যেতে। দুই-এক বছর ধরে নভেম্বরে পাখি আসছে না।
এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটার অন্যতম কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন। জলবায়ুর তারতম্যের কারণে পৃথিবীর স্বাভাবিক তাপমাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আগে তো নভেম্বরেই পুরোপুরিভাবে শীত চলে আসতো। কিন্তু এখন নভেম্বরের পুরোপুরিভাবে শীত আসেনি। দিনে গরম আর রাতে ঠাণ্ডা।
তবে, আমরা আশা করছি, যদি আবহাওয়ার বড় ধরনের পরিবর্তন না ঘটে তবে নভেম্বরের শেষে বা ডিসেম্বরের শুরু বাইক্কা বিলে পরিযায়ীরা আসা শুরু হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পাখি-আলোকচিত্রী বাংলানিউজকে বলেন, সম্ভবত গত বছর থেকে শুরু হয়েছে বাইক্কা বিলে অধিকমাত্রা পরিযায়ীদের না আসা। কারণ, গত বছর আমরা ঢাকা থেকে অনেক কষ্ট করে এসে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো পরিযায়ী পাখির ছবি তুলতে পারিনি। হতাশ হয়ে ফিরে গেছি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাইক্কা বিলের আশপাশে অনেক কৃত্রিম মাছে খামার বা ঘের তৈরি হয়েছে। ফলে মানুষ আনাগোনা আগের থেকে প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় পরিযায়ী পাখিরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছে না। মানুষজন দেখলে পাখিরা ভয় পায় এবং উড়াল দেয়।
পরিযায়ী পাখিগুলো বাংলাদেশে আসে তখন তারা দুটো বিষয়কে সববেচে বেশি প্রাধান্য দেয়-নির্জন স্থান এবং প্রচুর জলজ উদ্ভিদ সমৃদ্ধ জলাভূমি। কারণ জলজ উদ্ভিদের ভেতর এরা লুকিয়ে থেকে শক্রর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে। ফলে এসব শাপলা-পদ্ম বা অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের অভাবে বাইক্কা বিল আজ জলজ উদ্ভিদশূন্য হয়ে পড়ে। এ কারণে পরিযায়ী পাখিরা নিজেদের লুকতে পারছে না বলে তারা এখানে আসছে না বলে জানান এই পাখি আলোকচিত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২১
বিবিবি/এএটি