মৌলভীবাজার: ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি’ প্রচলিত এক বিশেষ শব্দ। এই শব্দের বাংলা অর্থ বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী।
তাদের মাঝেমধ্যে ক্যামেরায় এমন কিছু উঠে আসে- যা দেখে সেই বস্তুটির চারিত্রিক অজানা দিকটিও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়ে থাকে। শুধু সৌন্দর্যই নয়, প্রকৃতির উপকারী এসব জীবন্ত উপকরণদের গতিবিধি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেতে, বুঝতে সহজতর হয়। কেননা, আমাদের প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে সুস্থ রাখতে, পরিবেশকে বৃক্ষময় করে গড়ে তুলতে পাখিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের উপকারের উল্লেখ করে শেষ করা যাবে না!
তবে এরূপ দৃশ্যধারণ সহজলভ্য নয় কোনোক্রমেই। ক্যামেরা নিয়ে গেলাম আর এমন বিশেষ কোনো দৃশ্য চোখে সামনে ধরা পড়লো, বিষয়টি একেবারেই তা নয়। আপাতদৃষ্টিতে সহজ বলে দেখা গেলেও এমন একটি দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে একজন আলোকচিত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিতে হয় ধৈর্যের পরীক্ষা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে- একটি পাখির বিদ্যুৎগতি! একক ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর দিকে সে সর্বশক্তিতে অনায়াসে ছুটছে বাঁধাহীন! পাখির বিদ্যুৎগতিময়তাকে অপূর্বভাবে ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে। ধৈর্য্যসময়ে রাঙা তামাপিঠ লাটোরা’র এ দ্রুতগতিময় ছবি তুলেছেন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী আবু বকর সিদ্দিক।
তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, এই ছবিটি ঢাকার পূর্বাচল থেকে সম্প্রতি তোলা। পোকা ধরতে হঠাৎ সে লাফ দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে যাচ্ছিল।
এ পাখিটির নাম ‘তামাপিঠ লাটোরা’। এই ইংরেজি নাম Bay-backed Shrike এবং Lanius vittatus এর বৈজ্ঞানিক নাম। পাখিটি পরিযায়ী। পরিযায়ীর অর্থ যারা এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে বা এক দেশ থেকে আরেক দেশে নির্দিষ্ট সময়ে যাওয়া-আসা করে তাদের পরিযায়ী বলে। পরিযায়ী বলেই তার ডানায় ঝড়ের গতি! দৃশ্যটিও সেই অর্থে বিদ্যুৎগতিময়!
প্রখ্যাত পাখি গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, ‘লাটোরা’ Lanius Linnaeus (1758) ‘গণ’ এর পাখি। সারা পৃথিবীতে এই গণের অন্তর্ভুক্ত ২৭ প্রজাতির পাখির বিচরণ রয়েছে। তবে, আমাদের বাংলাদেশে এ গণের মাত্র ৬ প্রজাতির পাখির অবস্থানের রেকর্ড আছে। Lanius Linnaeus গণের একটি পাখি ‘তামাপিঠ লাটোরা’। এরা বাংলাদেশের প্রাক্তন পরিযায়ী পাখি। খুবই কম দেখা মেলে। বিশ দশকের মাঝামাঝিতে চট্টগ্রাম বিভাগে ছিল, এখন নেই। মাঝারি আকারের মাংসাশী পাখি তামাপিঠ লাটোরা। এদের ঠোঁট খুব বলিষ্ঠ। ঠোঁটের খাঁজ গভীর এবং ঠোঁটের ওপরের পাটি নিচের দিকে বড়শির মতো বাঁকানো। এদের শরীর অসংখ্য মোটা শক্ত ও দৃঢ় পালকে ঢাকা। উত্তেজিত হলে এরা কর্কশ গলায় ডাকাডাকি করে বলে জানান তিনি।
পাখিটির খাদ্যতালিকা ও বিচরণ সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, এ প্রজাতির পাখিরা ক্ষুদ্র ঝোপ, শুকনো ঝোপঝাড় এবং পতিত জমিতে সচরাচর একা কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে থাকে। খোলা নির্জন জায়গায় বসে ভূমিতে শিকার খোঁজে। তাদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে ফড়িং, ঝিঁঝি পোকা, ছোটপাখির ছানা, টিকটিকি, ইঁদুর প্রভৃতি। ভারত, নেপাল, ভূটান, মধ্যএশিয়া, ইরান, আফগানিস্তানসহ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই তামাপিঠ লাটোরা পাখিদের প্রজনন মাস। মাটি থেকে ২-৪ মিটার উঁচুতে গাছের ডালে, ঘাস, পশম, পাতা ও পালক মাড়কসার জালের সাহায্যে সুনিপুনভাবে বাসা তৈরি করে এবং দু-চারটি ডিম দিয়ে থাকে বলে জানান পাখিবিদ ইনাম আল হক।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২১
বিবিবি/এএটিa